জন্মদিন
সুমন অমৃত খাচ্ছে। সে অমৃত খুব পছন্দ করে। অমৃতের প্যাকেট তার পকেটে। অমৃতের গায়ে লেখা ‘GOLD LEAF’। নিচে সতর্কবাণী লেখা আছে। ধূমপানের কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। তার সমস্যা হচ্ছে না। নাক দিয়ে ইজিলি ধোঁয়া বেরুচ্ছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে ধূমপানের কারণে নাকি মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু এখনো হয় নি। কবে হয়ে যায় কে জানে?
সকালের নাশ্তার পর সিগারেট খেলে অমৃত খাওয়া হয়। সুমন সকালের নাশ্তা করেছে ১১ টায়। বেহেশতের খাবার। বেহেশতের খাবার পাওয়া যায় বিসমিল্লাহ হোটেলে। মেনু হচ্ছে পরাটা আর ডাল ভাজি। সাথে ফিল্টার পানি। ফিল্টার পানি ঠাণ্ডা হয়। ১ টাকা দাম। গ্লাসের বাইরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে থাকে। দেখতে ভালো লাগে।
এখন সুমন বসে আছে একটা ফাস্টফুডের দোকানে। ছোট্ট টেবিল। দু পাশে দুটো চেয়ার। সামনের চেয়ারে রুবা বসা। তার চোখ মুখ তিক্ষ্ম। সে সম্ভবত অমৃতের গন্ধ পেয়ে গেছে। রুবা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তার দম আটকে যায়। যে খায় তার দম আটকে না। কিন্তু পাশে বসে থাকলে দম আটকে যায়। এর কোন মানে হয়?
রুবার সিগারেটের গন্ধ পাওয়ার কথা না। সুমন চার টাকা দিয়ে দুটো সেন্টার ফ্রেশ খেয়েছে। সেন্টার ফ্রেশ খুব ভালো। এটা খেলে সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যায় না।
-তোমার চোখ মুখ বসা কেন?
সে কি !! চোখ মুখ দাঁড়িয়ে ছিল কবে?
– রাতে ঘুমাও নি?
না।
-কেন?
তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম।
-মানে? কি চিন্তা করেছ?
তুমি আমাকে দেখলে নাক মুখ কুঁচকে থাকো। এই ব্যাপারে চিন্তা।
-চিন্তা করে কোন সমাধান পেয়েছ?
হুম
-কি?
চিন্তা করার কারণে ঘুম হচ্ছে না। এটা বুঝতে পেরেছি। এটা আগে বুঝি নাই।
-ডাক্তার দেখাও।
ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। ওষুধের নাম ‘তুমি’
-ফালতু কথা বলবে না তো !!
রুবা অন্য দিকে তাকায়। সুমন আশ্বস্ত হয়। সিগারেটের গন্ধ তাহলে পাওয়া যায় নি। সেন্টার ফ্রেশ তার মান বজায় রেখেছে। তবে চোখমুখ বসে আছে এটা একটা সমস্যা। সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমাধান করা সহজ হবে না। রাতে রুবাকে চিন্তা না করে থাকা সম্ভব নয়। চিন্তা করলে ঘুমানোও সম্ভব নয়। সত্যিই ডাক্তার দেখাতে হবে।
রুবা তাকিয়ে আছে। এখন আর তার নাক মুখ কুঁচকে নেই। হাসি হাসি ভাব। হাতে একটা খাম। বড় খাম। ভিতরে কার্ড জাতীয় কিছু থাকবে। খামের উপরে লেখা… HAPPY BIRTHDAY. নিচে লেখা ‘TO SHUMON’ আজ কি তার বার্থ ডে? কত তারিখ?
সুমনের আজকের তারিখ মনে পরে না। মোবাইলে ক্যালেন্ডার আছে। বের করতে ইচ্ছে করছে না। তারিখ জেনে কি হবে। এর চেয়ে রুবার হাসি দেখা উচিত। সে সবসময় হাসে না। হয়ত হাসে। সুমন দেখে না। আজকে দেখছে। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। এরকম হলে হবে না। প্রতি সেকেন্ডের দৈর্ঘ্য কিছুটা বাড়ানো উচিত। অন্তত এমন এমন এক একটা দিনের জন্যে।