দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-৫)
॥ হারানো শাহীন ॥
রিদওয়ান সাহেবের মনে পড়ে, দু’বছর আগেও একবার এক বিপত্তি ঘটেছিলো। একটি বিবাহ উপলক্ষে ঢাকা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভায়রা বাড়িতে স্বপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। গ্রীষ্মকালীন ছুটি হিসেবে তাঁর কলেজ এবং শাহীনদের একাডেমী ছিলো বন্ধ। বড় ছেলে ফাহিম এবং মেয়ে ফারহানাকে বাসায় রেখে বেগম রিদওয়ান এবং শাহীনকে সহ গিয়েছিলেন বিয়েতে। ছুটি থাকায় বিয়ের পরদিনও তাঁদেরকে আসতে দেননি তাঁর ভায়রা–জেঠাস। ওদিকে বিয়ে বাড়ি থেকে মাইল খানেক পথ দূরে তখন চলছিলো বৈশাখী মেলা। পরদিন বিকেলে ঐ বাড়ির আত্মীয় ছেলে–মেয়েদের সাথে শাহীনও গিয়েছিলো সে মেলায়। মেলার ভিড়ের মাঝে এক পর্যায়ে অন্যান্য ছেলে–মেয়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শাহীন। ঐ বাড়ির ছেলে–মেয়েরা শাহীনকে খুঁজে না পেয়ে মনে করেছিলো শাহীন হয়তো বাড়িতে চলে গেছে। তাই ওরা বাড়িতে ফিরে আসে।
ভায়রা বাড়ির ছেলে–মেয়েরা বাড়ি ফিরার পর ওদের মুখে শাহীনের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার কথা শোনা মাত্র বিচলিত হয়ে পড়েন রিদওয়ান সাহেব। তাঁর ভায়রা হাসান মুরশিদসহ তৎক্ষণাৎ বের হন শাহীনের খোঁজে। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও, কোথাও ওকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান তাঁরাও। এরপর সারা রাতই জেগে থাকেন শাহীনের অপেক্ষায়। ভাবেন পথভুলে ঘুরাঘুরি করে একসময় হয়তো ফিরে এসে ডাক দেবে শাহীন। কিন্তু সারা রাতেও কোনো সন্ধান না হওয়ায়, সকালেই তাঁরা স্বামী–স্ত্রী রওয়ানা হন নরসিংদী। এসে দেখেন তাঁর ঢাকার এক দূরসম্পর্কীয় ভাইয়ের ছেলে সুমন এবং শাহীন নরসিংদীর বাসায়। এরপর শাহীনের মুখেই শোনেন ওর নরসিংদী পর্যন্ত আসার ঘটনা।
“মেলার ভিড়ে সন্ধার পরপরই শাহীন খালাবাড়ির আত্মীয় ছেলে–মেয়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর কিছুক্ষণ ওদের খোঁজাখুঁজির পর সে মনে করে, ওরা হয়তো বাড়িতে চলে গেছে। সেও ফিরে যাবার পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু শহুরে শাহীন, অন্ধকারে অপরিচিত গ্রামের পথ চিনতে পারছিলো না। তবুও সে কৌতূহল বসত কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে, সাহস করে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছে যায় বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড দেখে ভাবছিলো, রাতের আঁধারে এখন সে কী করবে? কোথায় যাবে? এমন সময় আসে একটি বাস। বাসের হেলপার ডাকতে থাকে, এই ঢাকা, গুলিস্তান, ঢাকা! কী যেনো মনে করে ঝট করে বাসে ওঠে পড়ে শাহীন। অমনি ছেড়ে দেয় বাস। এবারে বাসে বসে চিন্তা করে, রাতের বেলায় ঢাকা হয়ে কীভাবে যাবে সে নরসিংদীতে। আর নরসিংদী যেতে না পারলে, ঢাকায় কাদের বাসায় উঠবে রাত কাটানোর জন্যে? এমনি ভাবনার মাঝেই বাসের হ্যালপার ডাক দেয় “এই ছেলে, ভাড়া দেও”। এতে তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। বাসের ভাড়া দেয়ার জন্য সে পকেটে হাত দেয়। তখন টাকার সাথে বের হয় তার শখের ছোট্ট টেলিফোন ইনডেক্সটি। বাসের ভাড়া দিয়েই সে পাতা উল্টাতে থাকে টেলিফোন ইনডেক্সের। পেয়ে যায় ঢাকার সুমন ভাইয়াদের বাসার টেলিফোন নাম্বার। ভয়–ভাবনা কেটে যায় তার। চোখ–মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নির্ভয়ে চলে আসে ঢাকায়। ঢাকায় এসে বাস থেকে নেমেই পাশের একটি ফোন–ফ্যাক্সের দোকান থেকে ফোন করে ঐ নাম্বারে। ফোন রিসিভ করে ওর সুমন ভাইয়া। শাহীন ফোনে সুমনকে ফোন–ফ্যাক্সের দোকানটির নাম–লোকেশন জানিয়ে ওখানেই অপেক্ষা করে সুমনের। সুমন লোকেশন মতো এসে নিয়ে যায় শাহীনকে। পরদিন সুমনকে সহ সে চলে যায় নরসিংদীতে ওদের বাসায়।”