Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

বৃদ্ধ নিবাস

: | : ১৫/০৭/২০১৩

এই লনের ঘাসগুলো বেশ বড় বড় । নাজমা বেগম হাঁটতে বের হয়েছেন । তিনি খুব সকালে উঠতে পারেন না । কোন কালেই পারেননি । তার স্বামী মাহমুদ খুব  ভোরে উঠে হাঁটতেন । গায়ে একটা নীল রঙের টি শার্ট আর ট্রাউজার । শরীর বেশ সুঠাম । যখন হাঁটত তখন চোখ ফেরানো যেত না।   নাজমা অবশ্য উনি বের হয়ে যাবার পর পরই বিছানা ছাড়তেন । স্বামীর জন্য নাস্তা বানাতেন নিজের হাতে। কাজের লোকের উপর ভরসা ছিল না একদমই। স্বামীর স্বাস্থ্যর দিকে তার যথেষ্ট খেয়াল ছিল । কোনমতেই যেন তার এই সুন্দর শরীর ভেঙে না পরে তার দিকে যথেষ্ট খেয়াল ছিল।  তাদের প্রেমের বিয়ে ছিল । অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে মাহমুদকে বিয়ে করতে পেরেছিলেন নাজমা । বাড়ির কেউ রাজি ছিল না। তার পরও একসময় সব  মিতে গেলো । নাজমা মাহমুদের সংসারে চলে এলেন। মাহমুদ চেয়েছিল সন্তান একটু দেরি করে নেবেন। স্বামীর মতই ছিল তার মত । তাই বিয়ে হবার প্রায় পাঁচ বছর পর একমাত্র ছেলে মিজানের জন্ম হয়। দেরি করে সন্তান নেবার কারণেই মনে হয় ছেলে মিজানকে নাজমার চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন মাহমুদ। ছেলেকে কে বেশি ভালোবাসে এই নিয়ে প্রায়ই দুজনে প্রতিযোগিতা করতেন । মাহমুদ যদি অফিস থেকে ফেরার সময় খেলনা নিয়ে ফেরেন , নাজমা তবে মিজানের প্রিয় খাবার বানিয়ে ফেলতেন । ফলে ম্যাচ প্রায় সময়ই ড্র থাকতো । মাহমুদ ছোটোখাটো একটা সরকারী চাকরী করতেন । ফলে টানাটানির সংসার ছিল । মাস শেষ হতে না হতেই যোগানে কম পরতো। কিন্তু নাজমা কি অসম্ভব দক্ষতায় মাস পার করে দিত । ফলে ছেলের স্কুলের বেতন অথবা সংসারের আলাদা খরচের জন্য মাহমুদের তেমন কোন চিন্তা ছিল না। মিজান অবশ্য মায়ের জেদেই ভালো একটা ইঞ্জিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয় । মাহমুদের তেমন সামর্থ্য ছিল না তাই প্রথম দিকে একটু অমত করছিল কিন্তু বউয়ের কারণে সম্ভব হয় নি। অবশ্য ভর্তির সময় নাজমার বিয়ের সময়কার বালা দুটো হাতছাড়া করতে হয় । সবকিছু ঠিকঠাক চললেও  একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায় ছেলের পড়া যখন প্রায় শেষের দিকে। মাহমুদ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। ছেলেকে নিয়ে নাজমা অকুল পাথারে পরে যান । পরে এক এন জি ওর সহযোগিতায় ঋণ নিয়ে ছোটোখাটো একটা                            ব্যবসা দাড় করান। সেই সাথে মাহমুদের অফিস থেকে কিছু আসছিলো । অনেক কষ্টে মিজানের লেখাপড়া শেষ হয় । কিন্তু ততদিনে নাজমার শরীরে বা মনে আর শক্তির কিছু অবসিষ্ট ছিল না।

তবে একটা দায়িত্ব তার ছিলই । ছেলেকে বিয়ে দেবার দায়িত্ব । মাহমুদ বেঁচে থাকলে তার একার চিন্তা থাকতো না । কিন্তু এটা তার একার সময় । কিন্তু তার এই কষ্টটা আর করতে হলো না । ছেলে নিজেই পছন্দ মতো একজনকে ঘরে তুললো । ছেলের দিকে তাকিয়ে মা নাজমা বেগম মেনে নিলেন ।

মাস কয়েক যেতে না যেতেই মা এই নতুন দম্পতির সংসারে আগুন্তক হয়ে পরলেন । নতুন বউ শুধু মিজানকেই মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল । ফলে তার মা কিছুটা  পুরনো আসবাবপত্রের মতো এক কোণে পরে থাকার অভ্যাস করে ফেললেন । তবে তাতেও ঘরের নতুন বউয়ের হচ্ছিলো না । ঘরে কেমন যেন আবর্জনার মতো মনে হতো মিজানের মাকে । প্রথম দিকে মিজান কিন্তু বউয়ের এ ব্যাবহারের প্রতিবাদ করতো । পরে অশান্তি হয় ভেবে মায়ের পক্ষ নিয়ে কোন কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি । ফলে এক বছরের মাথায় নাজমা বেগমের কাছে বউ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্তা করতে বলেন । তাতে কিন্তু ছেলের প্রচ্ছন্ন সায় ছিল । সেই বউ একদিন এক বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা এনে হাজির । এতে অবশ্য মিজানের প্রবল আপত্তি ছিল । কিন্তু এবার নাজমা বেগম নিজেই ছেলের কাছে বৃদ্ধাশ্রমে যাবার কথা বললেন । অবশেষে স্বামীর একখান ছবি আর কিছু পুরনো দিনের সৃতি সাথে নিয়ে ছেলের সাথে চলে এলেন এই বৃদ্ধ নিবাসে । এখানে এসে একটা ব্যাপার ঘটলো । ছেলের উপর যে রাগ ছিল তা চলে গেলো । কারণ তার মতো আরও অনেকের সাথেই পরিচয় হলো । সবাই নাজমা বেগমের মতো ছেলেকে শেষ সম্বল দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন । আজ এই লনের ঘাসগুলো দেখে বহু দিনের পুরনো দিনের সৃতি মনে পরে গেলো । তার স্বামী মাহমুদের কথা , ছেলে মিজানের কথা আবার ছেলে বউয়ের কথা । ঘাসগুলোকে আর একবার দেখে নিলেন নাজমা বেগম । মালীকে ঘাসগুলো কাটতে বলতে হবে ।

 

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top