Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

মেঘলা দুপুর

: | : ২১/০৭/২০১৩

এই বাসে আজ তেমন ভিড় নেই । অবশ্য তার কারণ আছে। আজ শুক্রবার । অফিস দিন বাদে এই দিনেই একটু বাসে চড়ে আরাম পাওয়া যায়। অন্য যে কোন দিন হলে মেঘনা এত সহজে উঠতে পারতো না । কারন ভিড় মেঘনার একদম পছন্দ না। আর ধাক্কাধাক্কি করার অভ্যাস বেশী একটা নেই ওর । ফলে একের পর এক বাস ছেড়ে দেয় কিন্তু মেঘনার বাসে চড়া হয় না। যখন একটু কম মনে হয় বা পাশের কেউ ভদ্রতা করে বলে আপু আগে আপনি যান তখন উঠার চেষ্টা করে। তবে আজ আর এতো কষ্ট করতে হয়নি ।যদিও ভিড় থাকলেও আজ কিছু করার ছিল না। কারন আজ ও পালিয়ে যাচ্ছে।  দুটা টিকেট কেটে উঠেছে । একটা ওর নিজের আর অন্যটা জাহিদের জন্য । যার সাথে ও আজ পালিয়ে যাচ্ছে । সব পূর্বপরিকল্পনা করা ছিল । বাড়ির কেউ জাহিদের সাথে সম্পর্কটা মেনে নেয়নি । কিন্তু মেনে না নেবার কোন কারণ খুঁজে পায়নি মেঘলা। জাহিদ একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার। মোটা টাকা বেতন পায় । পরিবার মেঘলাদের থেকে কম না। তার পরও ঠিক কি কারণে মেঘলার বাবা জাহিদকে পছন্দ করলেন না মেঘলা বুঝতে পারেনি। সে বিয়ে ঠিক করে ফেললো প্রবাসী ছেলের সাথে। অতএব মেঘলাকে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে । সব মিলিয়ে জাহিদের অফিস সাত দিনের ছুটি দিয়েছে । রেজিস্ট্রি করে জাহিদ গেছে ওর বন্ধুর বাসায় । খুব দূরে না। কিছু টাকা নেবার কথা বন্ধুর কাছ থেকে। হাতে তেমন টাকা নেই । বলেছে টিকেট কেটে বাসে উঠতে । এই বাস যাবে সাভারে । সেখানে ওর আত্মীয়র বাসা । আজ রাত ওখানেই কাটিয়ে কাল গ্রামের বাড়ি । অসংখ্যবার যে বাড়ির গল্প জাহিদের মুখে শুনেছে মেঘলা। এই বাস আধঘণ্টা পর পর ছাড়ে । আর মিনিট পাঁচেক আছে সময় হতে। মেঘলা ঘড়ির দিকে তাকাল । একটু উত্তেজিত মনে মনে । জাহিদকে চোখের আড়াল করতে মন চাইছে না। এতক্ষণে পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেছে। তবে বাস ছাড়ার কোন নামগন্ধ নেই । এক লোক সময়ের কথা ড্রাইভারকে বলতেই সে না ঘুরেই বলল আইজ একটু দেরী হইবই । প্যাসেঞ্জার নাই । আর কেউ কিছু বলছে না। ড্রাইভারের বয়স বেশী হলে পনেরো হবে। বিড়ি টানছে সমানে। সেই ধোঁয়া ছাড়ছে  কুণ্ডুলি পাকিয়ে । এবং মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন বিশাল কোন কাজ করে ফেলেছে। এরমধ্যই মোটা মতন এক মহিলা মেঘলার পাশে এসে বসেছে। কনডাক্টর নিষেধ করেছিলো । দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলেছে সিট ফাঁকা আছে বইসি যখন লোক আসে উইঠা যামু । কন্ডাক্টর আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো । কিন্তু মহিলা তার চেয়েও জোরে বলে উঠলো তয় কই বসুম তর কোলে? সবাই একটু হেসে উঠলো । কনডাক্টর ছেলেটি আর কিছু বলার সাহস পেলো না। মেঘলা বাধ্য হয়েই একটু সরে বসলো । সেই মহিলা বসেই মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল অ্যাই মেয়ে যাইবা কই? মেঘলা কোন উত্তর দিলো না। সবাইকে সব কথার জবাব দিতে নেই। তবে মেঘলা শান্তি পেলো না। মহিলা বসার কিছুক্ষণ পরপরই মেঘলাকে উৎসুক হয়ে দেখছে। একবার দেখছে আর একবার চোখ মুখ বুজে কি যেন ভাবছে। একবার যেন কার সাথে মোবাইলে কথা বলল । ভাল দামের কথা বলল । আর তাছাড়া এই মহিলার গা থেকে কড়া একটা গন্ধ আসছে । মেঘলা কড়া ধরনের গন্ধ সহ্য করতে পারে না একেবারেই । তার বমি পায়। সে একবার অয়াক বলে বমি করার চেষ্টা করলো । মহিলা পাশ থেকে বলল অ্যাই মাইয়া বমি করবা? করলে করো । তারপর ওষুধ খাও । আমার কাছে আছে। আমার বাসে উঠলেই বমি হয় । এইজন্য কাছে কাছে রাখি । মেঘলা বলল লাগবে না। তার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো । যদি এই মহিলা দালাল ফালাল হয় । যদি মেঘলার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে। বাস যেন দেরী করেই ছাড়ে ।  কিন্তু তা আর হল না কারণ ড্রাইভার হাতের বিড়ি ফেলে দিয়েছে । স্টিয়ারিং ধরেছে। হেল্পারকে কি যেন একটা বলল । স্টার্ট দেওয়ার শব্দে ঠিক শোনা গেলো না ।মেঘলা  ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল এই ড্রাইভার আমার লোক আছে। কিন্তু ড্রাইভার শুনতে পেলো বলে মনে হয় না। পাশের মহিলাটি বার মেঘলার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। মেঘলা প্রচণ্ড ঘামতে লাগলো । গাড়ি অল্প অল্প চলতে শুরু করেছে। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল । জাহিদ দৌড়ে আসছে । এদিকেই আসছে। মেঘলা হাত নাড়ল। অবশেষে গারির ভেতরে পা রাখল জাহিদ। মেঘলার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল । যেন বলতে চাইছে সরি। হঠাৎ কি হল ঢাকা শহরের এই মধ্য দুপুরের প্রচণ্ড গরমেও মেঘলার এক অসম্ভব শীতল অনুভূতি হল ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top