Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ব্যাংক ড্রাফট

: | : ২৬/০৭/২০১৩

জয়ন্ত এই পার্কে বসে আছে ঘণ্টা দুয়েক হবে । মাঝে মাঝে ডান পা বাম পায়ের উপর তুলে নাচাচ্ছে আবার কখনো সামনের পুকুরের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে জীবনটা যদি এই পুকুরের জলের মত শান্ত হতো তাহলে বেশ হতো । তবে তা তো আর হয় না । জীবন হয় স্রোতের মতো । এই বারোটার সময় পার্কে যারা ঘোরাফেরা করে তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন বেশী ভালো না। এক যারা স্কুল বা কলেজ পালিয়ে প্রেম করতে আসে । এই যেমন এখন পুকুরের পারে স্কুলে পড়ুয়া দুটা মেয়ে (পড়নে স্কুল ড্রেস আছে বলে চেনা যাচ্ছে ) সমানে তার বয় ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করে চলেছে। জয়ন্ত আসার মিনিট দশেক পরেই ওরা এসেছে। বসে আছে আর কথা বলছে । মাঝে মাঝে ছেলেটি মেয়েটার কাঁধের ওপর দিয়ে হাত রাখছে । জয়ন্তর খুব দেখার ইচ্ছে এই অল্প বয়সী মেয়েরা এটা কিভাবে সামাল দেয়। তবে তা হয় না তার আগেই মেয়েটা হাত সরিয়ে দেয় । তবে প্রেমিকের তাতে তেমন কিছু যায় আসে না। সে নতুন উদ্যমে চেষ্টা করে যায়। আর এক শ্রেণীর যারা কর্মহীন কিন্তু সময় কাটানোর একটা মোক্ষম জায়গা দরকার তারা আসে । আর সর্বশেষ হল ভিক্ষুক শ্রেণী । জয়ন্ত ভেবে দেখল সে দ্বিতীয় স্থানে পড়ছে । ভবঘুরে টাইপের মানুষদের সাথে । ওর অবশ্য এটা খারাপ লাগে না । বরং মাঝে মাঝে মনে হয় এভাবে যদি জীবনটা পার করা যেতো ! এই যে আজ এখানে বসে আছে আর পা নাচাচ্ছে তার কারণ মাত্র পাঁচশো টাকা । যে টাকা নিয়ে শ্রাবণীর আসার কথা। কিন্তু আসছে না। যদিও শ্রাবণীর সময় জ্ঞান শূন্যর কোঠায়। এবং প্রতিবারই জয়ন্ত আসার দের থেকে দুই ঘণ্টা দেরী করেই আসে । তবে জয়ন্ত এটা মেনেই নিয়েছে । বড়োলোকের মেয়ে তো! বড়োলোকের মেয়ের সাথে প্রেম করার বিরাট যন্ত্রণার ব্যাপার। এদের জীবন এতো সময় মেপে চললে চলবে! সময় দেখে চলবে জয়ন্তরা । যাদের বেঁচে থাকাটা নির্ভর করে পার্কের বেঞ্চিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধনী প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে। তার হাতে এখন পাঁচ টাকা নাই অথচ একটা ব্যাংক ড্রাফট করার শেষ তারিখ আজ । না করলে মিস হবে। অতএব শেষ এবং একমাত্র ভরসা শ্রাবণী যার কাছে পাঁচশো টাকা মুড়ি মুড়কীর মত । সে বলেছিল সকাল দশটায় এখানে অপেক্ষা করতে । তবে জয়ন্ত প্রথমে চেয়েছিল টকাটা যদি অন্য কারো কাছ থেকে ধার করা যায় । সেই চেষ্টাও করেছিলো । যেমন আজ সকালেই সে তার মেসমেট বারেক সাহেবের কাছে টাঁকাটা চেয়েছিল । জয়ন্ত জানতো তার কাছে টাকা পাওয়া প্রায় অসম্ভব তার পরেও সকাল সারে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে সে ছাঁদে চলে গেলো । সেখানে বারেক সাহেব হালকা ব্যায়াম করেন । ছাঁদে গিয়েই দেখেন বারেক সাহেব একটা হাফপ্যান্ট পরে দৌড়ানোর মত কিছু একটা করছেন । ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়াতে এখন ব্যায়াম করার চেষ্টা করেন আগে করতেন না। কথায় কথায় একদিন বলেছিলেন’ বুঝলে ভায়া , এই সাত সকালে উঠে লাফালাফি করে গাধারা। ওরা ছোলা খায় যারা ব্যায়াম করে তাদের অনেকেই ছোলা খায় । হাঁ হাঁ হাঁ , বুঝলে নাকি কিছু? ‘ জয়ন্ত অবশ্য জবাব দেয়নি । সব কথার জবাব দেয়া বোকামি।  পেছনে ঘুরেই জন্তকে দেখে চমকে গেলেন তারপর বিশ্রী করে নাক ঝাড়ার চেষ্টা করলেন । এবং সবশেষে জয়ন্তর দিকে ফিরে বললেন ‘ কি ব্যাপার ব্রাদার আপনি তো এতো সকালে ওঠেন না , আজ হঠাৎ?

‘জি আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।‘

‘বলে ফেলুন। সোজা করে বলুন । কোন ভণিতার দরকার নাই । ‘

জয়ন্ত মুখ কাচুমাচু করে টাঁকার কথা এবং ব্যাংক ড্রাফটের কথা বলতেই বারেক সাহেব তার উঁচু হয়ে ওঠা ভুঁড়ি দুলিয়ে হাসতে লাগলেন ।

তারপর বললেন ‘না রে ভাই এই মুহূর্তে হাতে একদম টাকা নাই । এক সপ্তাহ পরে আসেন । ব্যাবস্থা করে দেবো ।‘

এদিকে জয়ন্তর দরকার আজকেই। আর ব্যাটা বলে এক সপ্তাহ পর। জয়ন্ত মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ঘরে আসতেই দেখল কাজের বুয়া হাজির।

‘মামা টাকা দেন। বাজার শেষ হইছে ।‘

‘টাকা নাই। তোর রান্না করতে হবে না । চলে যা।‘

তবে সে চলে গেলো না । কিছুক্ষণ বসে রইলো । মনে হয় পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো । তারপর উঠে গেলো । বাইরে বের হবার সময় দেখল বুয়া রান্না করে ভাত দিয়ে গেছে । মনে মনে বুয়াকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে গেলো জয়ন্ত।

পার্কের এই বেঞ্চির আশেপাশে কয়েকজন বাদাম ওয়ালারা ঘোরাফেরা করছিলো। একবার এসে জয়ন্তকে বলল ভাই বাদাম নেবেন? জয়ন্ত ইশারায় চলে যেতে বলল । তবে বেশী দূরে গেলো না।  একটু দূরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকলো । একটা ক্ষীণ আশা ছিল সে আবার ডাকবে । কিন্তু তা আর হলো না। জয়ন্তর পকেটে বেরুবার সময় মাত্র পাঁচ টাকা ছিল । গাড়ি ভাড়ায় সেটাও চলে গেছে । এখন ভারে মা ভবানী । অতএব বাদাম খাওয়া বন্ধ।

ঠিক দুই ঘণ্টা পনেরো  মিনিট পরে শ্রাবণী এলো । সাদা গাড়িতে চড়ে । অবশ্য গাড়ি সাধারণত বেশ দুরেই রাখে ।

কখন এসেছ?

তুমি আসার ঘণ্টা দুয়েক আগে। মিনিটের হিসেবে আরও কয়েক মিনিট বেশী ।

তুমি বিশ্বাস করো আরও আগেই আসতাম । এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেছে যে বাড়ি থেকেই বের হতে পারলাম না।

জয়ন্ত চুপ করে থাকলো । কারণ সে জানে প্রতি বারই শ্রাবণী দেরী করে আসে আর সাথে করে কিছু অজুহাত নিয়ে আসে। এমন সব উদ্ভট কাহিনী বলে যে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । শুধু টাকা নেবার খাতিরে কিছু বলে না। কে জানে বড়োলোকের মেয়ে তো। কখন কি ইচ্ছা হয়।

শ্রাবণী বলে যেতে লাগলো । ছোট চাচা সকাল এগারোটার দিকে তার নাস্তা খেতে বসেছে হঠাৎ দেখে প্লেটে তিনটা টিকটিকির ডিম । এই নিয়ে হৈ চৈ । কাজের বুয়াকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে । শাস্তি হিসেবে বাসায় যত টিকটিকি আছে সবগুলোকে জড়ো করে বাইরে ফেলে দিতে হবে । এই কারণে সে ঘর সাফ করতে লেগে গেছে । যদি এর পরেও টিকটিকি পাওয়া যায় তাহলে বুয়ার চাকরি নট । চূড়ান্ত ঘোষণা । আমি নিজেও দুই একটা টিকটিকি ধরে বুয়াকে দিয়েছি । একটু সাহায্য করলাম আরকি। অনেকদিন কাজ করছে তো । একটা সামান্য কারণে চাকরি চলে যাবে তা কি হয়? সেটা করতে গিয়েই তো দেরী হলো । তা বল তোমার যেন কতো টাকা লাগবে বলেছিলে?

পাঁচশো টাকা। তবে এখন পাঁচশো সত্তর টাকা। আমার কাছে যাওয়া আসার ভাড়াও নাই। ওকে কোন সমস্যা না। এই নাও।

এই বলে ছয়টি চকচকে একশো টাঁকার নোট এগিয়ে দিলো জয়ন্তর দিকে। জয়ন্ত হাত বারিয়ে সেটা নিলো । যদিও এটা নিতে প্রতিবারই বলে সব শোধ করে দেবো । আজো তাই বলল । উত্তরে শ্রাবণী কিছু বলল না। কারণ এটা শোধ করার কোন দরকার নাই । কিছু কিছু মানুষের জন্য কিছু করে বেশ আনন্দ পাওয়া যায় । জয়ন্ত হয়তো নিজেও বুঝতে পারে না শ্রাবণী এটা করে কতো খুশী হয় । জয়ন্ত উঠে দাড়ায় । শ্রাবণী গাড়িতে ওকে ছেড়ে দিতে চায় । জয়ন্ত রাজি হয় না। তবে শ্রাবণীর একটা হাত ধরে । পুকুরের পাশের ছেলেটি আবার মেয়েটির কাঁধে হাত রেখেছে । জয়ন্তর খুব ইচ্ছে হয় শ্রাবণীর কাঁধে হাত রাখতে । তবে সাহস হয় না। ওরা এগিয়ে যায় ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top