রাজা ও রাখাল বালকের বাঁশি
বাজায় বাঁশি,দুঃখ নাশি,
রাখাল বালক সুখে,
মনে বিভোর,মধুর এ ঘোর,
মৃদু হাসি তার মুখে।
প্রহর স্তব্ধ,কত নিঃশব্দ!
মন কাড়া ঐ সুরে,
পশু আর পাখী,নীরব থাকি,
নাচছে ঘুরে ঘুরে।
সে সুর যেন,মন নাড়ে হেন,
আপন পর ভোলা ,
গরু ও বাছুর,ভুলে যায় দূর,
সব মনে লাগে দোলা।
রাখালের গ্রাম,সুখচর নাম,
সুখের যেন রাজ্য,
গরীব,ধনবান,সব এক প্রাণ ,
সব এক,অবিভাজ্য।
এ বাঁশির সুর,বিভেদে’ দূর,
মনে আনে শুধু সুখ,
যত পশু পাখী,প্রকৃতিকে ডাকি’
হরে নেয় যত দুখ।
রাখাল বালক,দেবতার ঝলক!
সে সৎ ও সরল বড়,
চেহারা তার,বড় ক্ষুরধার,
আভা উজ্জ্বলতর ।
শিকার করতে,পশু পাখী মারতে
এক রাজা এলো বনে,
রাজা আনমনে,রাখালিয়া বাঁশি শোনে,
শোনে পুলকিত মনে।
রাজা এসে দেখে,বালক এ কে?
কালো,অথচ কি সুন্দর !
যেন দেবদূত,বাঁশি ধ’রে অদ্ভুত !
সুর টানে মনো মুগ্ধকর !
পশু পাখী বনে,শোনে আপন মনে
রাখালের তান বাঁশির,
কি কাণ্ড সব,সুখাবেগে নীরব,
ময়ূর নাচে,নাচ খুশির।
বাঁশি যখন থামে,’রাখাল! কি নাম,হে?’
রাজা রাখালে শুধান,
‘ব্রজাংগ,মোর নাম,করি রাখালি কাম,
বাঁশি যে আমার প্রাণ!’
রাজা আপন চালে,বলেন সে রাখালে,
‘আমার দেশে থাকবে?
তোমার মত সাধক,থাকলে বংশী বাদক,
আমার ভালো লাগবে !’
দুখী বালক বলে,‘কেমনে যাই চ’লে
ছেড়ে আমার ঘর,দেশ?
কাঁদবে সবাই,যদি আমি যাই ,
পাবে দুঃখ,পাবে যে ক্লেশ।’
রাজা গর্বে তার,বলে ওঠে,‘এবার
আমার রাজ্যে থাকবে তুমি,
এটাই উপদেশ,আমার আদেশ,
গেলে হবে ধন্য আমার ভূমি !’
রাজার মন্ত্রী,সাথের সান্ত্রী,
রাখালকে নিয়ে গেল ধরে,
মাতা পিতা সাথী,হোল অনাথই,
দুখে আকুলিবিকুলি করে।
এখন সকাল সাঁঝে,রাজার রাজ্যে বাজে,
রাখালের বাঁশির সুর,
কত আকর্ষণ,যেন সর্বক্ষণ,
লাগে কানে সুমধুর ।
কিন্তু এ সুরে,যেন দুঃখ ভরে,
বিষণ্ণতা যেন ঘিরে ধরে!
আছে ঘর ভরা,তবু সর্বহারা!
সবাকার মন কেমন করে !
যে শোনে বলে সেই,‘সুরের জুড়ি নেই’,
রাজ্যে তবু দুখ হাহাকার,
বুঝিতে না পারে,কে কবে কাহারে ?
কে করিবে রাজ্য উদ্ধার !
সাজা রাজার,সাজা প্রজার,
সব যেন মনোরোগী!
কি যে হবে বাবা!সবাই যেন বোবা,
প্রত্যেকে ভুক্তভোগী।
এবার রাজা হাঁকেন,সভাসদে ডাকেন,
গুণী,জ্ঞানী,সাধুজনে,
রাজা কন সবে, ‘বিধান দিতে হবে,
এ বিষাদ কি কারণে ?’
চুপ সবাই,উত্তর নাই!
সব হল অসমর্থ,
অনেক চিন্তা,অনেক ভাবনা,
সব হোল যেন ব্যর্থ!
শেষে এলো তিথি,রাজ্যে এলো অতিথি,
সত্যবাদী,সুধী,সরল,
রাজা তাঁরে সুধান,‘হে অতিথি মহান!
করো দূর এ দুঃখ গরল।’
এক গভীর রাতে,প্রাসাদের ছাতে,
বাজাচ্ছিল বাঁশি রাখাল,
সেই সুর সুনে,সে করুণ ধুনে,
অতিথি হোল বড় উতাল !
অতিথি দেখে,কান্না যেন ঢেকে,
ব্রজাংগ বাজায় বাঁশি,
সুর যেন আনে,রাখালের প্রাণে,
ছোঁয় বেদনা রাশি রাশি!
সুনে বংশী রব,বুঝে নিলো সব,
রাজ্যে কেন এ মনোব্যথা,
সভায় অতিথি,দুখের কারণটি,
খুলে বলেন সব কথা ।
বলেন,‘বালকের দুখ,হরেছে সব সুখ,
করুণ তাই বাঁশির সুর,
তারে আপন দেশে,ফিরিয়ে দিলে শেষে,
মনের এ রোগ হবে দূর।’
এবার এলো ক্ষণ,করেন আয়োজন,
দেন আদেশ রাজা,
‘যাও সিপাহী সান্ত্রী,থাকবে সঙ্গে মন্ত্রী–
আর ঢোল বাদ্যি বাজা।’
‘নতুন বেশে,সাজাও এসে
রাখাল বালক আবার হাসুক,
ব্যথা মনের,ব্যথা বনের
শোক দুঃখ সব নাসুক।’
রাখাল শেষে,আপন দেশে
ধরল বাঁশি এসে,
সাথী,মাতা,পিতা,বনের সব মিতা,
দুঃখ ভুলল শেষে।।