রাত যখন বারটা
একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম আমি । সুন্দর,ঠিক যেন চাঁপা ফুলের গন্ধ ! হঠাৎ এমন গন্ধ কোথা থেকে আসছিল বুঝতে পারছিলাম না । আকাশের দিকে তাকালাম । মাথার ঠিক ওপরে না,দূরের ডাল পালা,জটাজুট বট গাছের ফাঁক দিয়ে তৃতীয়ার চাঁদ দেখা যাচ্ছিল । গন্ধ আমায় ক্রমশ মোহিত করে তুলছিল । এ কি রকম, চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম । মনে হচ্ছিল আমি ঠিক আমাতেই আছি তো ! কে আমি ?
আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম । কেমন নিস্তেজ মনে হচ্ছিল !
নিজেকে একবার ঝাঁকিয়ে নিলাম–না,তাও শরীরের ঝিম ঝিম ভাব সরছিল না । কোন স্বপ্ন দেখছিলাম না তো ? নিজের গায়ে চিমটি দিতে চেষ্টা করলাম–খুব হালকা ভাবে যেন আমার নখ আমার গায়ে ঠেকল । আমার মনে হল আমি ঘুমিয়ে আছি । তবে কি এই গন্ধ—যা আমার নাকে আসছে তা স্বপ্ন–সত্য নয় !
মনে মনে বললাম–ঠিক আছে তবে স্বপ্নই দেখিনা ! স্বপ্ন তো জীবনের অনেক খানি অংশ জুড়ে থাকে । ঠিক তক্ষনি আমার মনে হতে থাকলো আমায় কেউ যেন ডাকছে–তাই নাকে পাচ্ছি চাঁপার গন্ধ ! আমি এগিয়ে গেলাম ধোঁয়ার ঠিকানা ধরে।
কেউ জেগে নেই–রাত অনেক হবে–নিশ্চয় রাত বারোটা হবে–আমি এগিয়ে যাচ্ছি ।
অনেকটা এগিয়ে গেছি আমি । তা প্রায় হাজার গজের ওপর পথ হবে । কে যেন আমায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । আমাদের বাড়ির শেষ সীমানার পুকুরের কাছাকাছি এসে গেলাম । আঁধার কাটিয়ে চাঁদের আলো আগে থকে আরও একটু বেশী প্রস্ফুট লাগছিল । কিন্তু সেটা যেন রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল ! পুকুর ছাড়িয়ে আমি আরও এগিয়ে গেলাম,দূরে ছাতিম গাছের ঝাপড়ানো মাথা আবছা দেখতে পাচ্ছিলাম । দেখলাম ছাতিম গাছের নীচের কিছুটা জাগা আবছা আলোকিত । আলো তত জোরালো নয়,তবে কেন্দ্রিত–কোনও এক মনুষ্য দেহ ঘিরে ছিল মনে হল সেটা !
আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম,মনে হচ্ছিল ওই ছাতিম তলা আমার লক্ষ্য স্থল । ছাতিম গাছের অনেকটা কাছে এসে গেলাম । দেখলাম একটি মেয়ে–কখনো উজ্জ্বল,কখনো অনুজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে–কে ? চেনা চেনা লাগছিল । আরও এগিয়ে গেলাম–এ কি ! এ যে নিশি ! আমাদের কলেজের মেয়ে নিশি,কিন্তু ও ত তিন মাস আগেই মারা গেছে!
–কেমন আছ তপন দা ? স্পষ্ট মেয়েলি গলা,হ্যাঁ,নিশির গলার মতই লাগছিল ।
আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম,যদিও শব্দটা যেন প্রতিধ্বনি হোয়ে আসার মত লাগছিল—কে ? বলে আমি চমকে উঠলাম ।
–আমি–নিশি বলছি,তপন দা ! নিশি ম্লান হাসছিল,আমায় ভয় পাবেন না তপন দা,আমার একটা কথা রাখবেন ?
–কি কথা ? আমার মুখ দিয়ে যেন আপনি কথা কটা বেরিয়ে এলো ।
আপনার বন্ধুকে বলবেন,সে যেন আমার সঙ্গে একটি বার দেখা করে । আর আমি তাকে বিরক্ত করবো না । শুধু একবার তাকে দেখতে চাই । তপন দা,তারপর আমি চলে যাবো,অনেক দুরে,আর আমার দেখা কেউ পাবে না । শুধু আমি প্রতীক্ষা করতে থাকবো আপনার বন্ধুর জন্যে ।
নিশি যেন হাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে গেলো । ওর মিলিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ছাতিম গাছের নীচটা কেমন যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো । আমি লক্ষ্য করলাম নেই–সেই চাঁপার অলৌকিক সুগন্ধ কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে !
আমি ঘরের কাছে আসতে আসতে আমার পূর্ণ অনুভূতি যেন ফিরে পেলাম । চার দিক নিঝুম,টু শব্দ পর্যন্ত হচ্ছিল না । তার মানে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ঘরে ঢুকলাম,বিছানায় আমার স্ত্রী শুয়ে ঘুমিয়ে আছে । গভীর ঘুমে সে মগ্ন।
এই পায়রা ডাঙা মফস্বল এরিয়াতে প্রতাপ চৌধুরী অবস্থা সম্পন্ন লোক । কোনও এক সময়ে নাকি ওঁরা জমিদার ছিলেন । এখন জমিদারি প্রথা বহু দিন আগেই লুপ্ত হয়ে গেছ । কিন্তু জমিদারী আদব কায়দা এখনো প্রতাপ ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । রক্তের ধারা নাকি চট করে মেটে না । প্রতাপ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে অবিনাশ । অবিনাশ আমার বন্ধু । আমরা নৈহাটি কলেজে একই সঙ্গে পড়ছি । সে কলেজেই পড়ে নিশা নামে একটি মেয়ে ।
নিশা থাকত চাকদায় । পায়রা ডাঙা থেকে চাকদা তিন কিলোমিটারের দূরত্বে । কলেজে পড়তে পড়তে নিশার সঙ্গে অবিনাশের ভাব ভালোবাসা হোয়ে গেলো ।
আমি অবিনাশকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম,কি রে বিয়ে করবি তো নিশাকে ?
–হ্যাঁ রে,ওকে জীবনে না পেলে মরে যাবো আমি,বড় করুণ হোয়ে বলে ছিল অবিনাশ ।
–মেসো মশাই রাজী হবেন ?
–সেখানেই তো সমস্যা রে ! তুই তো বাবাকে জানিস ! তুই একটু বাবাকে বলবি আমাদের ব্যাপারে ?
–আমি ! ভাবছিলাম এত সাহস কি আমি পাবো ? মেসোমশাই যদি আমায় বকে দেন !
–প্লিজ,তপন,আমার জন্যে এটুকু কর তুই ! আমার হাত ধরে বন্ধু অবিনাশ আমায় বলেছিল ।
নিশাকে আমার ভালো লাগতো । দেখতে শুনতে খুব ভালো ছিল ও,রঙ সামান্য চাপা ছিল ঠিকই কিন্তু মুখশ্রী,চেহারা খুব সুন্দর ছিল । এক দেখাতেই বেশ আকর্ষণীয় বলা যায় । আমায় ও ভালো ভাবে চেনে–আমি অবিনাশের বন্ধু সেটাও তার জানা ছিল ।
একদিন কোন কারণে অবিনাশ কলেজে না এলে আমার কাছে এসে নিশি জেনে যেত অবিনাশের খবর ।
এমনি একদিনের ঘটনা–অবিনাশ সে দিন কলেজে কোন কারণে আসে নি । নিশি আমার কাছে এসে কেঁদে দিলো,বলল,তপন দা,আমি আপনার বন্ধুকে ভালোবাসি,আপনার বন্ধুর বাবা আমায় মেনে নেবেন তো ? প্রশ্ন করে করুণ ভাবে আমার দিকে নিশি তাকিয়ে থাকলো ।
আমি কি বলব ঠিক করতে পারলাম না ।
আমায় নীরব থাকতে দেখে নিশি বড় করুণ ভাবে বলে উঠলো,তপন দা আপনার বন্ধুকে না পেলে আমি মরে যাবো । কথা কটি বলে ও আমার হাতটা খপ করে নিজের হাতে তুলে নিলো,বলল,দাদা,আমায় বাঁচান,আমি…আর কিছু বলতে পারছিলো না নিশা । কান্নায় ওর মুখ বুজে আসছিল ।
পরে জেনে ছিলাম নিশি অন্তঃসত্ত্বা ।
মেসোমশাই আমার মুখে সমস্ত কথা শুনে কিছু সময় চুপ থাকলেন । ওঁর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওঁকে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল না । হঠাৎ তিনি গম্ভীর ভাবে আমায় বললেন,তুমি এখন যাও,আর এ বাড়িতে কোন দিন এসো না ! কথা কটা বলেই তিনি ভেতর ঘরে চলে গেলেন ।
আমি লজ্জিত ও হতভম্ব হোয়ে ঘরে ফিরে এলাম ।
এরপর একটি মাস কেটে গেছে । আমি অবিনাশের বাড়ি আর যাই নি । মনে মনে ঠিক করেছি আর কোন দিন যাবো না ওদের ঘরে । কলেজে নিশি ও অবিনাশ বেশ ক দিন ধরে আসছিল না । মেসো মশাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হবার পর থেকে আমি অবিনাশকে অনেকটা এড়িয়ে চলছিলাম । তবু একদিন ও এসে বলে ছিল,আমার কি দোষ বল ? আমি তো তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি নি রে !
আর এক সপ্তাহ পরের কথা হবে,হঠাৎ শুনলাম,নিশি নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে ! কলেজেই কথাটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগছিল । সে দিন অবিনাশকে কলেজে দেখলাম না ।
নিশি মারা যাবার তিন দিন পরের ঘটনা । হঠাৎ দেখি উদভ্রান্তের মত অবিনাশ আমদের ঘরে এসে হাজির । চেহারায় ওকে অসুস্থ বলে মনে হল । ওকে বেশ রোগা লাগছিল,ওর চোখ দুটো লাল লাল দেখাচ্ছিল ।
–তোর সঙ্গে কথা আছে,অবিনাশ বলে ।
–কি বল,তোর শরীর ভালো তো ? অবিনাশের চেহারা দেখে আমি বলে উঠি ।
–না রে ভালো নেই । আমি পড়া শোনায় মন দিতে পারছি না । কিছু ভালো লাগছে না ।
–যা হবার তা তো হোয়ে গেছে রে ! এখন নিজেকে সামলে নে ।
–কি করে সামলাই বল ! ও তো আমায় রোজ ডাকে–আমি রোজ যাই–নিশির সঙ্গে রোজ আমার দেখা হয় ।
আমি চমকে উঠি,বলিস কি !
–হ্যাঁ রে,রোজ খেয়ে দেয়ে আমি যখন শুতে যাই তখন থেকে আমার মনে হয় আমার নিশি ডাকছে । আমি ঘুমাতে চেষ্টা করি –আমার ঘুম ভেঙে যায়–ঠিক রাত বারটায় আমি জেগে যাই । একটা গন্ধ–সুন্দর গন্ধ আমার নাকে এসে ঠেকে…এ,আর…বলে থেমে গেলো অবিনাশ । কিছু সময় চুপ করে কি যেন ভাবল,তারপর বলে উঠলো,আমায় একটু জল খাওয়াতে পারবি ?
–হ্যাঁ,হ্যাঁ,নিজেই জল এনে ওর হাতে দিলাম ।
ঢক ঢক করে পুরো গ্লাসের জল গলায় ঢেলে আমার দিকে তাকাল, কিছু যেন বলতে চাইল ও।
আমি বললাম,হ্যাঁ,তারপর কি হল বল !
–ও,হ্যাঁ,বলে পুরনো প্রসঙ্গের খেই ধরতে চেষ্টা করল,বলল,জানিস কেমন যেন ফুলের গন্ধ পাই–আমার নাকে এসে ঠেকে চাঁপা ফুলের গন্ধ ! আমি আমাতে থাকি না তখন,আমাদের বাড়ির সীমানার পুকুর পার হোয়ে চলে যাই সেখানে–যেখানে একটা মাথা বড় বট গাছ আছে! তার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে নিশি–আমার জন্যে অপেক্ষা করে ও !
নিশি আমায় বলে,রোজ আসবে তুমি–এমনি করেই আমরা নাকি বেঁচে থাকবো । ও আমাকে সান্ত্বনা দেয়,বলে,আমার জন্যে তুমি চিন্তা করো না,আমি আছি–আমি থাকবো–তোমার অপেক্ষায় থাকবো । রোজ রাতে তুমি এসো গো !
–রোজ রাতে তুই যাস ? আশ্চর্য হোয়ে আমি প্রশ্ন করি অবিনাশকে ।
কিছু সময় চুপ থেকে কিছু ভেবে নিয়ে অবিনাশ ধীরে ধীরে বলে ওঠে–আমি রোজ রাতে যাই । আমরা এক সঙ্গে বসে থাকি–গল্প করি–হাসি খেলি—দুজনে ছোঁয়া ছুঁয়ি খেলি ।
–বলিস কি ! তোর ভয় হয় না ?
–শুরুতে কদিন ভয় হতো–এখন আর হয় না । এখন ভালো লাগে,খুব ভালো লাগে রে । আবার খানিক থেমে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,জানিস ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না !
–বলিস কি ! ও ত মানুষ না,ও ত–
আমায় থামিয়ে দেয় অবিনাশ । বলে,না রে,অমন করে বলিস না,ও আমায় খুব ভালোবাসে । ওকে ছাড়া একটা রাত আমি থাকতে পারি না !
আমি বলি,কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক নয়–এ ভবে তো চলতে পারে না !
–কেন পারে না ? একটু বিরক্তি নিয়েই অবিনাশ বলে উঠলো,আমি ভালো আছি–আমার জীবনে ভালোবাসা আছে–আর কি চাই বল ! ও যাই হোক—আলাদা কিছু আমি তো বুঝতে পারি না ! ও আমার গা ছোঁয়–আমি ওকে ছুঁই,ভালো লাগে–ভালোবাসার কিছু ব্যতিক্রম আমি তো অনুভব করি না ! জানিস,আমি ভাবছি এটাই ভালো । ওকে নিয়েই না হয় এ জীবনটা আমি কাটিয়ে দেবো ।
–না,এটা হতে পারে না,এমন ভাবে কারো জীবন চলতে পারে না । তুই নিজেকে সামলা ।
–না ! হঠাৎ অবিনাশ চীৎকার করে উঠলো,আমি পারবো না–ওকে ছাড়তে,আমায় ওকে ছাড়ার কথা বলবি না ! অবিনাশ আমার উপর রাগ করে উঠে দাঁড়াল ।
আমি বললাম,শোন,বস তো !
অবিনাশ আর বসলো না–আমার কথার জবাব না দিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেলো আমাদের ঘর থেকে ।
এ ঘটনার পর প্রায় তিন মাস কেটে গেল । একদিন কানে এলো –অবিনাশ নাকি পাগল হোয়ে গেছে । ওকে নাকি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে । কি করি ? ভাবছিলাম । সেটা ঠিক এমনি দিনের কথা ছিল—রাত তখন বারটা—চাঁপার গন্ধ আমার নাকে এসে ঠেকে ছিল আর আমি চলে গিয়েলাম সেই ছাতিম তলায় । দেখে ছিলাম নিশিকে । ও আমায় বলেছিল,একটি বার অবিনাশের সঙ্গে ওর দেখা করিয়ে দিতে । কিন্তু কি করে সম্ভব তা ? ও তো এখন পাগল হয়ে গেছে । আর ওর বাবার আমার প্রতি সেই খারাপ ব্যবহার করার পরে আর কোন দিন অবিনাশের বাড়ি আমি যাই নি । এখন কি করে যাই তাই ভাব ছিলাম । কিন্তু নিশির কথা মত একবার তো আমার তাকে বলতে হবে যে শেষ বারের মত নিশি তাকে ডেকেছে !
নিশির কথা আমি যেন কোন মত ফেলতে পারছিলাম না,আমার মনের ভিতর থেকে কেমন ভাবের উদয় হচ্ছিল,মনে হচ্ছিল যে করে হোক অবিনাশকে আমি নিশির কথাগুলি বলে আসি । নিশি তাকে শেষ বারের মত দেখা করতে বলেছে–কথাগুলি জানিয়ে দিই অবিনাশকে ।
সকাল দশটা হবে । আমি অবিনাশদের বাড়ি পৌঁছালাম । ভয় হচ্ছিল মেসোমশাইকে নিয়ে,কি বলতে কি বলে বসবেন আমায় ! কলিংবেল চাপলাম । ঘরের চাকর হবে,দরজা খুলে দিলো । আমায় বসতে বলে সে বাবুকে ডাকতে গেলো । দু মিনিট পরেই অবিনাশের বাবা,মা এক সঙ্গে এসে হাজির । মায়ের চোখ ছল ছল করছিল । তিনি বলে উঠলেন,বাবা,আমার ছেলে পাগল হোয়ে গেছে বাবা ! কারো কথা ও শোনে না । রাত হলেই ও বন বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় । নিশি মেয়েটা নাকি ওকে নিয়ে ঘোরে !
মেসোমশাই অনেক নরম হয়েছেন দেখলাম,বললেন,ছেলে আমার পাগল হোয়ে গেছে । শুধু ওই মরা মেয়ের কথা বলে,ওর সঙ্গে আপন মনে কথা বলে । রাত হলেই কোথাও চলে যায় ! এখন পাগলের ট্রিটমেন্ট চলছে ওর । ঘরে আটকে রাখা হয়েছে.তুমি একবার ওর সঙ্গে দেখা করে যেও ।
আমি তাই চাইছিলাম । অবিনাশের ঘরের দিকে এগোলাম । ঘরের দরজায় বড় তালা ঝুলছে দেখলাম । ঘরের পাশের জানালা খোলা ছিল,সেখান দিয়ে উঁকি দিলাম আমি । আবছা অন্ধকার ঘর । অবিনাশ কিছু কথা বলছিল । বোঝা যাচ্ছিল না কি কথা,কাকে বলছিল ! আমি ডাক দিলাম,অবিনাশ ! তিনবারের ডাক ওর কানে গেলো,ধীরে ধীরে উঠে এলো জানলার কাছে ।
আমি বললাম,কেমন আছিস ?
অবিনাশ কেবল,ঘাড় হেলাল,কি বলতে চাইলো বুঝলাম না ।
আমি আসতে করে বললাম,তোকে নিশি একবার যেতে বলেছে ।
ও উতলা হয়ে বলল,তিন দিন আগে নিশি এসেছিল,তারপর আর কেন আসছে না,তুই জানিস ? ও বলে ছিল রোজ আসবে–আমার সঙ্গে বসে গল্প করবে–অন্ধকার ঘরে আমরা সারা দিন গল্প করব—জানিস,আমি আর ও রাতে এক বিছানায় শুবো ! ও বলেছে, আমরা বিয়ে করবো ! নিশি বলেছে ও মালা আর সিঁদুর নিয়ে আসবে ।
আমি আবার বললাম,অবিনাশ,তোকে নিশি ডেকেছে ।
অবিনাশ নিজের মনেই বলতে লাগলো,যাবো আমি যাবো—নিশি আমায় ডেকেছে—আমরা বিয়ে করবো । ও আমার আর কোন কথা না শুনে নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে অন্ধকার ঘরের কোনে চলে গেল ।
আমার আর কিছু করার ছিল না । অবিনাশের জন্যে খুব দুঃখ হচ্ছিল । চুপচাপ বেরিয়ে এলাম ওদের ঘর থেকে ।
একদিন পরের কথা । খুব খারাপ সংবাদ আমার জন্যে অপেক্ষা করছিলো । জানতে পারলাম অবিনাশ গতকাল রাতে আত্মহত্যা করেছে । নিজের ঘরে ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে !
এক প্রেমিক যুগলের অকাল মৃত্যু বড় দুঃখ দিয়ে গেলো !
সমাপ্ত