Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ওপারে নিলয়

: | : ০৪/০৯/২০১৩

চাকুরীর সূত্রে ভাড়াটে হয়ে থাকে রোহান রোদেলাদের পাশাপাশি বাসায়। লোকমুখে শুনে রোদেলা দেখতে খুব সুন্দরী। যেন প্রথম ভোরের কোন ফুল। অনেক কথার ভেতর রোদেলা থাকে কখনো রোদ্দুরে কখনো বৃষ্টিতে। রোহান আরও শুনে রোদেলার প্রেমে পড়ে একজন তিন তিনবার পাগলী গারদে গেছে। মাংসহারা হাড়সর্বস্ব শরীরে ফিরে এসে পাগলটা বলল- সেখানে বসে সে সিগমা পাই দিয়ে জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্য আবিষ্কার করেছে। আরো অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে সেগুলো সে রোদেলাকে দেখাবে আর অন্য কাউকে না।

দুই.
পাড়ায় বিস্তর কানাঘুষা। কান থেকে কান ঘুরে যখন রোদেলার কানে আসে তখন ওই কথাগুলোর মধ্যে থাকে নানান রংমাখানো। রোদেলারা যেখানে থাকে সেখানে অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত ও দরিদ্র। সমাজের অনেক কিছু তারা দেখেনি, শুনেনি, বুঝে না। তাদের সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন। ঠিক তেমনি ওইসব অশিক্ষিত মানুষগুলো মনে করে তাদের মতো সবাই অন্ধ।
বাসা থেকে বের হলে হ্যাংলা চোখগুলোর ভীড়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয় শামুকের মতো। ধীরে ধীরে রোদেলা নিজের চোখে হয়ে ওঠে অচেনা। কথাগুলো শুনার পর প্রথম প্রথম দিনগুলো কাটতো চুপচাপ একা একা তারপর হঠাৎ শুরু হয় ভাংচুর। এখন আর তারাও আসে না, যাদের কারণে রোদেলা পাড়ায় সমালোচিত। যাদের কারণে রোদেলার চরিত্র নিয়ে ওঠেছে প্রশ্ন।

তিন.
চাকরীর গৎবাঁধা সময়ের কারণে কিছু বুঝে ওঠতে পারে না রোহান। সকালে যাওয়া রাত করে বাসায় ফেরা। এ রুটিনে চলে রোহানের জীবন। বুঝে ওঠতে পারে না কী হচ্ছে আসলে।
একদিন রাতে শুনে কান্নার শব্দ। যেন কেউ মরে গেছে। দরজা খুলে বাইরে এসে জানতে চায় রোহান-কী হয়েছে? ঘরেতো বাচ্চা-কাচ্চা নেই। তাহলে এমন করে কে কাঁদে। মনে মনে কথা বলা শেষ হতে না হতে দরজা খুলে রোদেলা এসে ঝাপটে ধরে বলে- আমাকে বাঁচান! ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ইনজেকশন ঔষুধ,ওহ্ প্রচন্ড ব্যাথা।
রোদেলার বড় ভাইর কাছে শুনতে চায় রোহান- আসলটা কী? খুব মেধাবী ছাত্রী রোদেলা, ক্লাশে বরাবরই ফার্ষ্ট। কী যে হলো ইদানিং তার পাগলামীটা বেড়েছে। এখন সামলানো দায়।
আপনি পাশের ঘরে নতুন এসেছেন। কি বলবো আপনার কাছে। জানি জ্বালাতনে ঘর ছাড়বেন। ডাক্তার বলেছে ভালো আচরণ করতে। কোন কিছুতে কাজ হয় না বলে ঔষুধ আর ইনজেকশনের আশ্রয় নিতে হয় আমাদের। ডাক্তার এও বলেছেন, ভালো বুঝেন এমন কারো সঙ্গ পেলে সেরে যাবে।
– কি করে হলো এমন?
– মেধাবী বলে তার সব বন্ধুরা তার কাছে আসতো গ্র“প ষ্ট্যাডি করার জন্য। বন্ধুদের সবাই ছিলো ছেলে, একজনও মেয়ে ছিলো না। সব মেয়ের মাঝে সেই একমাত্র মেধাবী বলে সব মেয়ের হিংসা তার প্রতি। বান্ধবী বলতে কেউ ছিলো না। ছেলেরাই তার বন্ধু ছেলেরাই তার বান্ধবী। তার গ্র“প ষ্ট্যাডিটাই কাল হলো। পাড়ার একেক জনের একেক রকম মন্তব্য। উসকানি ছিলো তার ক্লাশের মেয়েদেরও। এতে নানা ধরণের অপমান ও লজ্জাকর মন্তব্য শুনতে শুনতে এক সময় এরকম হয়ে যায় তার।
রোহান ভাবে নারীর শত্র“ যে নারী হয় তার কথা।
রোদেলাদের কাছে রোহান প্রতিদিন আসবে এমন কথা দিয়ে ছুটে আসে।
এরপর থেকে রোহানের রোদেলার খাতায় হাজিরা নিয়মিত হয়ে যায়। না গেলেই সে-ই ছায়া ফেলে রোহানের দরজায়। ভালোবেসে সারাতে চায় পাগলামী।
এভাবে আস্তে আস্তে রোদেলা রোহানের বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে কি যেন বলে। রোহান গভীর মমতায় রোদেলাকে টেনে রাখে বুকে। ভাঙনের সুর থামিয়ে রোদেলা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এখন দু’জনের স্বপ্ন আরও গভীরে দানা বাঁধতে শুরু করে।একজন আরেকজনের চোখে দেখতে পায় ভালোবাসার নিলয়।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top