পাহাড়ের রানী রিসাং ঝরনা
রিসাং ঝরনা পাহাড়ের রানী। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে করে আসতে পারেন ঝরনার সড়কে। ত্রিপুরা ভাষায় তেরাংতৈ কালাই ঝরনায় গিয়ে এবার পায়ে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে, তবেই দেখা মিলবে পাহাড়ের রানীর। হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে আদিবাসী ত্রিপুরাদের গ্রাম। এক পাহাড়ে একটি বাড়ি। দেখে অবাক লাগে! কেন এমন নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে তারা? যাত্রাপথ কম নয়। অনেক উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে ওঠা। একটু কষ্ট হলেও ঝরনা দেখে ভুলে যাবেন সব।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখা পাবেন ছোটখাটো চায়ের দোকান। ইচ্ছে হলে এসব দোকানে বসে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। এরপর আবার হাঁটা। কিছু দূর গিয়ে নজরে পড়ে আদিবাসীদের ঐতিহ্য জুম। বৃষ্টি-বাদলের এই সময়ে মারপা, ঝিঙেসহ বিভিন্ন ধরনের জুমের ফলন তোলা হচ্ছে। জুমে গিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন, ভালোই লাগবে। এরপর আবার হাঁটা। গভীর অরণ্যঘেরা পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ের ওপর কালাই গ্রামে দেখবেন প্রতিটি ঘরের পেছনে আঙিনায় কলাগাছের ঝোপ। অবিরাম ঝিঁঝি পোকার ডাক, নানা জাতের পাখির কলরব আর বাতাসে দোলখাওয়া গাছগাছালির আওয়াজ একসঙ্গে মিলে প্রকৃতি এক অন্য রকম সুর তৈরি করে রেখেছে এখানে।
প্রায় ৪৫ মিনিট এগোনোর পর পাহাড়ি পথ শেষ করে হঠাৎ চোখে পড়বে রিসাং ঝরনার সিঁড়ি। এরপর কান ফাটানো পানির আওয়াজ। আরো একটু এগিয়ে নজরে পড়বে ঝরনা। ধাপে ধাপে বেয়ে চলেছে পানি। তাতে বসে বা দাঁড়িয়ে পানিতে গা ভিজিয়ে নিতে পারেন। মাঝে মধ্যে আবার পানির স্রোত বেড়ে হঠাৎ ধাক্কা মারে। সে জন্য সর্তক থাকা প্রয়োজন। ঝরনাটির নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট হ্রদ। পানির মাঝখানে বড় বড় পাথর আছে, যাতে বসে আড্ডা দিতে পারেন। সারা বছরই রিসাং ঝরনায় পানি থাকে। শুধু তাই নয়, দুর্গম এলাকা থেকে এসে আদিবাসীরা খাওয়ার পানি নিয়ে যায় ঝরনা থেকে।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে গাড়িতে করে ঝরনার সড়কে এসে নেমে ঝরনায় যাওয়ার জন্য হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে তেমন অসুবিধা হবে না। পথে আদিবাসীদের আতিথেয়তা মুগ্ধ করবে। সময় নিয়ে বের হলে ঝরনার পাশে আরো দেখতে পাবেন আলুটিলা গুহা ও বৌদ্ধবিহার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় চাঁদের গাড়ির কাউন্টার। এখান থেকে দরদাম করে গাড়ি নিতে পারেন।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে আসতে হলে কলাবাগান, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে সৌদিয়া, এস আলম, স্টার লাইন বা শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে নামতে হবে। যারা চট্টগ্রাম থেকে আসবেন, তারা চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে শান্তি পরিবহনের বাসে উঠে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে নামবেন। থাকতে পারেন পর্যটন মোটেল, শৈল সুবর্ণা, ইমাং রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল রেস্টুরেন্ট বা হোটেল জীরানে।