Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

যাতনার পাবকে সাগর জ্বলে ১

: | : ১১/০৯/২০১৩

এ বৈচিত্রময় পৃথিবীতে রয়েছে বৈচিত্র উদ্ভিদ,প্রাণি,ও পদার্থ । যেদিকেই নজর পড়ে স্রষ্টার সৃজন আমাকে মুগ্ধ করে । এদের সমন্ধে জানার খুবই কৌতুহল আমার শৈশবের । তাই চোখের সম্মুখে যা পড়ত তার সমন্ধে হরেক প্রশ্ন চিত্তে ভীর করত । মাকে অধিক বিরক্ত করতাম বিভিন্ন প্রশ্নের দ্বারা । যেমন-আমরা খাই,হাঁটা চলা করি । কিন্তু বই খাতা চেয়ার টেবিল ঘর বাড়ি গাছ পালা খায় না কেন ? হাঁটে না কেন ? এদের কি আব্বু আম্মু নেই ? এরা পড়াশুনা করে না কেন ? ঘুমায় না কেন?এদের কি ঘুম পায় না ? মা এক বাক্যে উত্তর দিত, ” এদের জীবন নেই তাই ” । আমার জানার স্পৃহা আরও বেড়ে যেত,আগ্রহের সহিত ফের জিজ্ঞাসা করতাম,জীবন কি ?দেখতে কেমন? কোথায় থাকে?এদের জীবন নেই কেন ? ” আল্লাহ দেয়নি তাই “। কেন দিল না ? মা বিরক্ত হয়ে বলত, ” বড় হলে বুঝবি “। কে বুঝাবে ? ” পড়ালেখা করলেই জানবি ” । মায়ের পড়াশুনার দৌড় ক্লাস ফোর পর্যন্ত ।পাকিস্তান আমলের ছাত্রী ছিলেন । একদিন ইংরেজি পড়ায় মার খেয়ে সেদিনই তার স্কুল জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে । পরে গাঁয়ের মক্তবে কুরআন পড়া শেখেন । মা যদিও সঠিক সংজ্ঞা ও ব্যখ্যা দিতে অপারগ ছিলেন । তবুও আশ্বাস দিত বড় হলে জানতে পারব । তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি ছিলাম সবার ছোট । বড় ভাই মেজো ভাই ছিল আমার থেকে সম্পূর্ণ পৃথক । আমার ন্যায় কেউকে বিরক্ত করতো না ।তাই পরিবারে সকলের ছিল প্রিয়পাত্র । কেবল আমি ছিলাম সবার চক্ষুশুল । কেউ আমাকে সঙ্গ দিত না বিরক্তের ডরে । কোন মেহমান বাড়িতে এলেই হৃদয়ে আশার সঞ্চার হত । এরা বুঝি বলতে পারবে ,বায়ু দেখতে কেমন ?বৃষ্টি কেন হয় ?আরও কতক হরেক জিজ্ঞাসা । সর্বদাই আমার মুখে প্রশ্ন লেগেই থাকত । অতিথিরাও জবাবে ব্যর্থ হয়ে চরম বিরক্তবোধ করত । তাই কুটুম এলেই মা আমাকে বড় ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলত ,” ওকে নিয়ে পড়তে বসো ” । ভাইয়া আমাকে অ আ ই ঈ পড়াত । আমি পড়ার পূর্বেই শুধাইতাম , ” এগুলো কে লিখেছে “? এর উত্তর বুঝি তার অজানা ছিল । তাই ধমক দিয়ে বলত , ” পড়া বাদ দিয়ে আকামা প্রশ্ন ,এক থাপ্পরে সব দাঁত ফেলে দেব “। ভাইয়া যখন রাগ হতো তখন তার চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করতো আর ডাগর হতো । মনে হয় এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে । তাই ভীষণ ভয় পেতাম । তার চোখে তাঁকানোর সাহস আমার হত না । পরে মাকে অভিযোগ করতো ,তোমার ছেলেকে কোনো স্কুলে পড়াতে পারবে না । কেন ? পাজিটা যে সমস্ত প্রশ্ন করে ,তার উত্তর মাস্টারের চৌদ্দ গুষ্টি জানে কিনা আমার সন্দেহ । আমার ছিলাম খান্দানি বংশের লোক । দাদার ছিল অগাধ সম্পদ গরু মহিষের পাল , হাতিও ছিল । হাতিকে ব্যবহার করত বাহন হিসেবে । পাঁচ সাত জন চাকর নিয়োজিত ছিল সর্বদাই । দাদাকে ছাড়া গাঁয়ের কোন সালিস পর্যন্ত হত না । জমিদারি খেতাব না থাকলেও,অর্থ সম্পদ জমিদারের তুলনায় স্বল্প ছিলনা । কিন্তু পাগলা নদী তিস্তা গ্রাস করেছে সবকিছু । বাপ দাদার কষ্টের ধন সম্পদ কেড়ে নিয়ে পথের মানুষ বানাতে বিন্দু মাত্র কৃপা সৃষ্টি হয়নি হৃদয়ে । সর্বক্ষণ সে যেন ক্ষুধার্ত থাকে । প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের জমা-জমি ভক্ষণ করেও উদর অপূর্ণ থাকে । এ সর্বচ্চো খাদকের পেট কখনই ভরেনি আর কশ্শিন কালেও ভরবেনা । এ গ্রাসীনি খাদকীনি নদী আমাদের অবস্থা করেছিল বড় সোচনীয় অর্থ্যাত্‍ হত দরিদ্র । এ করুণ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবার অবকাশ পায়নি । বড় ভাইয়ের চাকুরী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুচে গেছে । আমি শৈশব থেকেই কারো চোখের পানি সহ্য করতে অপারগ । আমারও আঁখি বেয়ে টপ টপ অশ্রু ঝড়ত । প্রায়ই মাকে অঝোড় নয়নে কাঁদতে দেখতাম । বারণ করতাম, ” কোন ফল হত না বরং ডুকরে ডুকরে কাঁদত । আমিও নিজেকে সামলাতে না পেরে , মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফুকরে ফুকরে কাঁদতাম । পরে জানতাম নানাজির কথা চিত্তে জাগলেই কেঁদে কেঁদে হৃদয়ের যাতনা হালকা করত । মাত্র চল্লিশ বত্‍সরে না ফেরার গন্তব্য অবস্থান করেন । এক প্রতিবেশীর সহিত ভূমি সংক্রান্ত বিবাদ থাকায় জাদু টোনা করেছিল নানাজির ওপর । তাই ফুটবলের ন্যায় ফুলতে ফুলতে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন । চিকিত্‍সার জন্য ঘন্টা খানেক সময়ও তার ভাগ্য জোটেনি । ঐ পারের ঘাট থেকে বুঝি তরী ছেড়ে দিয়েছিল । যার ফলে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যান । তাঁর অকাল মৃত্যু মাকে পরে পরে কাঁদায় । আমি কাঁন্না মাখা বদনে আব্বাকে বলতাম ,” মা কাঁদে কেন “? আব্বা উত্তর দিত, ” দুঃখ কষ্ট মনে পড়েছে তাই ” । দুঃখ কষ্ট কি?দেখতে কেমন ?কোথায় থাকে?কি খায়? অনেক সুন্দর বাবু বুঝি ? তাই না ? না ,অনেক পঁচা তাই আম্মুকে কাঁদায় । আমার প্রশ্ন শেষ হবার পূর্বেই একটা কষা ধমক দিয়ে বলত,” তুই বুঝবি না ” আমি ছুটে গিয়ে পেট বুক ফুফিয়ে ফুলিয়ে কাঁদতাম যতক্ষণ না মা থামতো । আমার কাঁন্না দেখে মা মন ভরে কাঁদার সুযোগ পেত না । কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যেত । হয়তো আব্বার প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা ছিল । তাই ধমকিয়ে আমাকে থেমে দিত । আব্বা নিজের নাম ব্যতীত অন্য একটি কার চিহ্ন বা বর্ণ লিখতে অক্ষম ছিল । সখের বেশেও একদিন স্কুলের ভেতর প্রবেশ করেনি । বড় ভাই তাকে হাতে ধরে স্বাক্ষর শিখিয়েছেন । জানার স্পৃহা সমন্ধে উত্‍সাহ উদ্দীপনা শান্তনা পেতাম শুধু মাত্র মায়ের কাছ থেকে । আর অন্যদের নিকট ছিলাম চক্ষুশুল ।আমার সঙ্গ তাদের মনে হত তিক্তময় । মায়ের আশ্বাস আমার জীবনে বিন্দু মাত্র মিথ্যে হয়নি । বিজ্ঞান নিয়ে মেট্রিক ও আই এ পাশ করেছি বেশ সম্মানজনক ফলাফলে । আর উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে অনার্স পড়ছি । এখন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তাই শৈশবের অজ্ঞত বিষয় সমন্ধে বেশ অবগত । মানুষের হরেক রকম জানার বা দেখার কৌতুহল থাকে আমিও তাদের থেকেও ভিন্নতর নই । আমার হঠাত্‍ বড় স্বাধ জাগল বিভিন্ন পেশার মানুষের অবস্থা জানতে । তারা কেমন আছে ? তাদের মনে কি সুখ ও শান্তি আছে ? তাদের কি কোন দুঃখ কষ্ট আছে ? থাকলে তা কিসের জন্য ?

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top