Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

আকাশের ঠিকানায় চিঠি

: | : ১১/০৯/২০১৩

প্রতি রাতে ঘুমে ভেজা দুটি চোখে কেমন যেন মায়াবী একটা মুখ ভেসে ওঠে। কানে ভেসে আসে কিছু সুর, কিছু কথার প্রতিধ্বনি। একটা কন্ঠ বাতাসে দোল খায়,ঘুর্ণিপাক হয়ে ওড়ে যায় আকাশে। একেবারে  তারার দেশে। মেঘের সাথে মিলাতে মিলাতে মিলে যায় দৃষ্টির ত্রিসীমানায়। আমি হন্য হয়ে খুঁজে ফিরি। কিন্তু আর যে পারছিনা দিদি। তুই কোথায় হারিয়ে গেলি। জীবনের বাস্তব প্রশ্নগুলো বুকের ভেতরটাকে যেন ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে।
কেন-কেন এমন হয়? কেন এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে প্রিয় মানুষটি অকালে চলে যায়—? এত ভালোবাসা…এত মায়া…এত বন্ধন…এত স্মৃতি…সব ছেড়ে কেন এভাবে চলে যায় মানুষ?কেন এত নির্মম এই বাস্তবতা? মৃত্যুর কাছে বুঝি সবাই এরকম অসহায়?
দিদি তোকে খুব মিস করছি। ছুটে আয়না আমাদের  মাঝে। তোর ফুটফুটে সন্তান দু’টোর কাছে। কেন এত অভিমান হয়েছে তোর? এত রাগ করলি কেন সবার সাথে? বুকের ভেতর কেন জানি শুন্যতা অনুভব হয়। হু হু করে কেঁদে ওঠে মন। দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয় পরিবেশ। শুনেছি মানুষ মরে গেলে আকাশের বুকে ঠাঁই হয়। তুই ও কি তাহলে দূর আকাশে মিটি মিটি জ্বলা তারা।
দিদি এমন করে এত অল্প সময়ে চলে যাবি  একটু জানতাম ও না। মাকে দিয়ে গেলি দুঃখ,যন্ত্রনা,অশ্র“ আর পাগলামী। মার কথা একটু ও ভাবলিনা ? আমাদের করলি দিদি হারা, তোর সন্তানদের করলি এতিম।
দিদি তুই কেমন আছিস খুব জানতে ইচ্ছে করে। তোর কি কোন কষ্ট হচ্ছে? প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিস সেদিন তুই তাইনা? ওহ্ আমি কিচ্ছু বুঝে ওঠতে পারিনা, প্রতিনিয়ত তোর স্মৃতিরা আমাদের কুঁরে কুঁরে খায়। দিদি তোর অভাবে আমাদের পুরো পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রকৃতিতে নেমে আসে আঁধারের ছোঁয়া। ভালোবাসার জাল বুনে স্বামী,সংসার, সন্তান ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারলি তুই। দিদি তোর দৃষ্টিভঙ্গি, চলাফেরা, সত্যনিষ্ঠা, কর্মনিষ্ঠা সব কিছু আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তুই শুধু আমাদের দিদিতে সমাপ্তি ছিলি না, ছিলি একজন আদর্শ স্ত্রী, শ্রেষ্ঠ মা আর আমার প্রিয় বোন।
দিদি যে সন্তানকে পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসতে গিয়ে তুই অন্ধকারকে বেচে নিলি, তোর সে সন্তান আজ ছোট্ট পায়ে হাঁটে। আধো আধো কথা বলে ফিক করে হাসে,ক্ষণে ক্ষণে মা বলে ডাকে। তোর ছেলেটা হাজারো প্রশ্ন করে আমাদের-‘আমার মা কোথায়, কবে আসবে?’ আমরাতো কিছুই বলতে পারি না।কেবল নীরবে অশ্র“ জ্বরে চোখ থেকে। তোর ছোট্টমণি কি আধো বুঝতে পারবে পরম নির্ভরতায় সে যে মানুষটির বুকে মুখ লুকাবে, আতœতৃপ্তি খুঁজে পাবে সেই মা যে আর  কোন দিন ফিরে আসবেনা। কিভাবে সহ্য করবো বল দিদি। তুই কি তবে শ্লোক বলা কাজলা দিদির মতো সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি? শিউলি ফুলের গন্ধে যখন সারা বাড়িময় ভরে ওঠে তখন তোকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করে।
দিদি আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিস। তোর ওপর আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে বিধাতার ওপর খুব রাগ হয় যদি এত অল্প সময়ের জন্য তোকে পৃথিবীতে পাঠালো তবে এত বন্ধন তৈরী করলো কেন?
দিদি তুই ওই সপ্তষী আকাশে নক্ষত্র হয়ে খুবই ভালো থাক। সব সময় সুখে থাক। দিদি তোর কাছে চিঠি লেখার কোন ঠিকানা যে আমার জানা নেই,তাই আকাশের ঠিকানায় লিখে গেলাম তোর কাছে মনের সব কথা…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top