Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “মসনদ”

: | : ১২/০৯/২০১৩

images (10)

কিনারার সন্নিকটে পৌছিতেই স্বচিত্কারে ছলিম কহিল,বাবা ওহা কি ?

ছলিমের কথার বিশেষ গুরুত্ব না দিয়া তাফি বহিত্র বাহিতেই প্রবৃত্ত রহিল। ছলিম দ্বিতীয়বার চেঁচানোর পর তাফি গ্রীবা ঋজু করিয়া সম্মুখপানে স্থির দৃষ্টি ফেলিল এবং সঙ্গে সঙ্গেই জোর হস্তে বহিত্র বাহিতে আরম্ভ করিল। সামান্য ব্যবধান কমিতেই জলের উপর একাধিক শবদেহ ভাসিতে দেখিয়া বিস্ময়ে বিহ্বল হইল। জলের স্রোতের সঙ্গে ভাসিয়া বেড়াইতেছে অর্ধ নগ্ন ও দিগম্বর শব। কাহারো বক্ষে ক্ষত, কাহারো পৃষ্ঠে, কাহারো আবার উভয় স্থানেই। শব দেখিয়া তাফির ঠাহর করিতে বিলম্ব হইল না যে, খানিক পূর্বেই কেহ জীবন্ত মানুষগুলোকে ছরাঘাতে ক্ষত বিক্ষত করিয়া গিয়াছে ।  ক্ষতস্থান হইতে ক্ষরিত রক্ত জল প্রবাহে মিশেল হইয়া জলের ধূসরতায় ভাগ বসাইাতছে। আকস্মাত ঢের সারা শবের ছাড়াছড়ি দেখিয়া ছলিম যদি ভীতিগ্রস্থ হইয়া পড়ে, খানিকক্ষণ আবসন্ন থাকিবার পর এই আশঙ্কায় কিনারার উদ্দেশ্যে তাফি ফের স্বজোরে বহিত্র বাহিতে লাগিল ।

ভেলা ছাড়িয়া ডাঙ্গায় পা ফেলিতেই তাফি কাকুতির আওয়াজ শোনিতে পাইল। আওয়াজটি  ঠিক যেন ডানপার্শ্ব হইতে বাতাসে ভাসিয়া আসিতেছে। তাফি দৃষ্টি ফেলিতেই সামান্য দূরে কাহারো উপস্থিতি টের পাইল । সমুনিকটে পৌছিতেই এক যুগল পৌঢ় নারীপুরুষকে কিনারায় লুটাইয়া পড়িতে থাকিতে দেখিল। দুইজনার-ই এক তৃতীয়াংশ জলে আর দুই তৃতীয়াংশ ডাঙ্গায় । দুইজন-ই আহত। মহিলার নিকট গিয়া তাফি শঙ্কিত স্বরে শুধাল, কী হইয়াছে ?

অস্পষ্ট নারী স্বরটি দস্যু দস্যু বলিয়া কাতারাইতে আরম্ভ করিল। ছলিমের প্রাণপণ সহযোগিতায় তাফি আহত আহত দুইজনকে আপন গৃহে লইয়া আসিল। তাফির গৃহটি ভাঙ্গা কুটির বৈ অন্য কিছু নহে। বৃক্ষ পত্রে আচ্ছাদিত একখানা কুঁড়েঘর মাত্র। সেইখানটিতে পিতাপুত্র গাদাগাদি করিয়া রাত্রি যাপন করে। গৃহটি নদীর ধারস্থ হওয়ায় আহতদিগকে সোয়ার করিতে তেমন বেগতিক হইল না।

 

তাফি ঢের খোঁজাখোঁজি করিয়া প্রতিবেশি গাঁও হইতে একজন হেকিম আনিয়েছে। রাত্রিতেই মহিলার সংজ্ঞা ফিরিল। তাফির ঘর দেখিয়া ঈষদ বিস্মিত হইলেও খেদমত ও সহানুভূতিতে বেশ চমত্কৃত হইলেন । এইদিক ঐদিক নয়ন হেরিয়া খানিক পর আদ্র স্বরে জিজ্ঞাস করিলেন, তুমি কে ?

তাফি স্ববিনয়ে কহিল, সামান্য একজন ধীবর।

মহিলা মন্থর দৃষ্টিতে ঘরের আসবাবপত্র দেখিয়া লইলেন। ঘরে আসবাব বলিতে উল্লেখযোগ্য কিছু নাই বলিলে মিথ্যাচার করা হইবে না । এক কোণে দুইখান মাটির পাত্র। বিচালির উপর কাঁথা বিছাইয়া আহতদের জন্যে শয়নের ব্যবস্থা করিয়াছে। বিছানার একপ্রান্তে ভিজা গালে বসিয়া আছে ছলিম। খানিকক্ষণ পর তাফি ফের কহিল, আমার এই গরীবখানায় আপনাদের কোনো তাকলিফ হইতেছে না তো ?

ভদ্র মহিলা তাফির প্রশ্নের কোনো প্রকার জবাব করিলেন না। ক্ষণকাল পর ছলিমকে দেখাইয়া বলিল, ইহা তোমার সন্তান ?

তাফি শির দোলাইয়া হ্যাসূচক জবাব করিল। মহিলা হাতের ইশারায় ছলিমকে কাছে ডাকিলেন। ছলিম সন্নিকটে আসিবার পর মহিলা তার মাথার উপর স্নোহময়ী হাত রাখিলেন। স্নেহকাতর মাতৃহারা ছলিম হৃষ্ট হইল। খানিক পর তাফি জিজ্ঞাস করিল, আপনাদিগকে কে বা কাহারা আহত করিয়াছে ? নদীতে ঢের সারা লাশ ভাসিতেছে, কাহাদের লাশ, কাহারা নিহত হইয়াছেন ?

ভদ্র মহিলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়িয়া ক্ষীণ স্বরে কহিলেন, পরোয়ার দিগার আমাদিগকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখে পতিত করিয়াছেন। আমরা জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছি।

ইহা বলিয়াই মহিলা জল পানের আগ্রহ প্রকাশ করিল।  তাফি মাটির কুম্ভ হইতে জল ঢালিয়া আনিয়া মহিলার হস্তগত করিল। জল পান করিবার পর মাটির বাসন মাটিতে রাখিবার উদ্যত হইতেই ছলিম তাহার হস্ত হইতে বাসন লইয়া যথাস্থানে রাখিল। ক্ষণকাল পর তাফি ফের জিজ্ঞাসিল, ওনি কে ?

মহিলা সংজ্ঞাহীন লোকটির প্রতি তাকাইয়া হৃষ্ট ঠোঁটে জবাব করিলেন, পূতরাজ্যের মহান অধিপতি সম্রাট শাহ আহমেদ সুফী ।

ইহা শোনিবার সঙ্গে সঙ্গেই তাফি আকস্মাত দাড়াইয়া পড়িল । বাকরুদ্ধ হইয়া সম্রাটের সুরত মোবারক দেখিতে লাগিল।

পরক্ষণেই মহিলা তার আপন পরিচয় তুলিয়া ধরিয়া কহিলেন, আর হইলাম রানী গুলনাহার।

তাফি অবনত শিরে রানী সাহেবাকে কুর্নিশ করিল। তাহার পর ছলিমকে ডাকিয়া কুর্নিশ করিতে বলিল। ছলিম কুর্নিশ করিতে উদ্যত হইতেই রানী সাহেবা ছলিমকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকিল।

 

 

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top