Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

অনেক কথা৮

: | : ১৪/০৯/২০১৩

প্রকৃতির রূপবদল–

* কে বলে প্রকৃতির আজ রূপ বদল হয়েছে! প্রকৃতি তো প্রকৃতিই। প্রকৃতি কি কখনো নানান রূপ ধারণ করে? নিশ্চয় ‘না’। আকাশ যেখানে আছে–সেখানেই আছে। মাটিও অপরিবর্তনশীল। শুধু মানুষ ঘুরছে তাই পৃথিবী ঘুরছে। কৃষ্ণচূড়ায় প্রতিবছর একই ফুল ফুটছে। ঘোড়াও কোনো ডিম দিচ্ছে না। ডুমুরগাছেও কোনো ফুল ফুটছে না। কাঁঠালগাছও একই ফল ফলাচ্ছে। এককালে ষোল টাকায় ষোল বিঘা জমি কেনা যেত, আরেককালে এসে ষোল শ টাকায় জমি নামের দলিল লিখাও হচ্ছে না! এটাই বোধহয় প্রকৃতির রূপবদল?

 

* আসলে এটা একটি ভাল কাজ। ইসলামি ব্যাংকে দেখি, সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং কার্যক্রম স্থগিত করে কর্মকর্তা কর্মচারিসকল সারিবদ্ধভাবে জোহরনামাজ আদায় করছে! সত্যি এটা উত্তম, দশ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু তার পূর্বে ক্যাশ কাউন্টারে লক্ষ করি, এক অসহায় ভদ্রলোকের আকুল আবেদন! ভদ্রলোকের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর করুণদশা ‘টাকা চায়’। তাঁর পশ্চাতে বেশকতক গণসংযোগ দেখে ক্যাশ প্রদানকারী ভদ্রলোক অস্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে–‘দশ মিনিট’ ‘দশ মিনিট’ করে একে একে সকলে কাউন্টার ছেড়ে যাচ্ছে। এরকম অনেকেরই অনেক সুবিধাসুবিধার ব্যাপারাদি থাকতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টাকা এমন এক জিনিস প্রতিমুহূর্তে মানুষের প্রয়োজন, যার টাকা নেই সে অচল। টাকা বন্ধু যেমন আবার শত্রুও তেমন। তাই টাকার জন্যে মানুষ সবকিছু করতে পারে, এমনকি নরকে ঝাঁপ দিতেও এক পা কাড়া। এই টাকা তাদের জন্যে শত্রু হয়। আর টাকার সদ্ব্যবহার যারা করে টাকা তাদের বন্ধু বটে। প্রার্থনাকারীর বিনীত নিবেদন দশ মিনিটের করতলে চাপা দিয়ে কাউন্টারের সকলে দ্রুত কাউন্টার ছেড়ে গেল! প্রার্থনাকারী নিরুপায়। তবে এ-ই দশ মিনিট প্রদানকারীর জন্যে নগণ্য হতে পারে, কিন্তু গ্রহণকারীর জন্যে হাজার মিনিট-অপেক্ষা জঘন্য। এখানে গুরুত্বের বিষয় এই–প্রভুর এবাদত করতে সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করা কি এতই জরুরি? আশ্চর্যের কথা–আল্লাহ্‌‌র কোথাও নির্দেশ দেখি না যে, আহারনিদ্রা এবং সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে এবাদতে মগ্ন হও। এমন কথা কোথাও প্রকাশ নেই। তবে, মানুষ সব সময় কিছু-না-কিছু অতিরিক্ত করতে অভ্যস্ত! করুক–এমন জায়গায় অন্তত কিছুটা কার্যক্রম জনস্বার্থে সচল রাখুক; তা রেখেও কিন্তু এসব করা যায়। একটু পর আরাধনায় প্রভুর কোনো অসন্তুষ্টি আছে বলে মনে হয় না। তা হলে? সবকিছুতে মানুষেরই অত্যুক্তি! সবকিছুতে মানুষেরই বাড়াবাড়ি! সম্ভবত এটাই প্রকৃতির রূপবদল?

 

* আমি পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারি, কিন্তু দশজন জ্ঞানীর মতো তুখোড় হতে পারি না; কারণ, আমি ভাবুক নয়–ভুলুক। একটা সময় ছিল, যা পড়তাম তা বড়শির মতো আটকে যেত; আরেকটা সময় এসেছে, যা করছি তাও ভুলে যাচ্ছি মুহূর্তে। হতে পারে, এটাই প্রকৃতির রূপবদল!

 

* একসময় মানুষ কবিতার রূপরস-ছন্দরীতিকে খাদ্যানুযায়ী গ্রহণ করছে। আরেকসময় দেখা যাচ্ছে, কবিতার গদ্যরীতিকে দুর্বোধ্য রসহীন অখাদ্য মনে করছে! গল্পকারের রূপকথাকে আনন্দরূপে গ্রহণ করছে। বলা যায়, এটাই প্রকৃতির রূপবদল।

 

* আমরা দলবেঁধে স্কুলে যেতাম। ছুটির পর ধূলি উড়িয়ে বাড়ি ফিরতাম। সেকি আনন্দ! আমাদের প্রাথমিকবিদ্যালয়ের পাশে ছিল মস্ত একটা পুকুর–অনেকটা দিঘির মতো। স্কুলপক্ষ থেকে এপুকুরে মাঝে মাঝে আমাদের সাঁতারপ্রতিযোগিতা হত, আমি দুয়েকবার বিজয়ীও হয়েছিলাম। স্কুলের মাঠটা ছিল অসম্ভব রকমের বড়। এখানেও স্কুলপক্ষ হতে নানান ধরনের খেলাধুলা হত। একবার আমি দৌড়প্রতিযোগিতায় প্রথমবিজয়ী হই : পুরস্কার পাই খাতাকলম–সেকি আকাশছোঁয়া আনন্দ–আকাশের চাঁদ হাতে পাই!

ইদানীং স্কুলমাঠে দেখি, আমাদের স্মৃতির চিহ্নমাত্র নেই–বটতলা হয়েছে বিভাবসুর রৌদ্রভূমি। খোলামাঠ দেয়ালঘেরা—সঙ্কীর্ণতায় অনেকটা শ্রীহীন। আমি অবাক, কোনো খেলাধুলা নেই! আনন্দোল্লাস নেই! যেন অত্যাধুনিকতার বেড়াজালে জিম্মি নগরী। এটাই মনে হয় প্রকৃতির রূপবদল?

 

চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top