Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

অধরা স্বপ্ন

: | : ১৫/০৯/২০১৩

আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। আজ আকাশের মন খারাপ। এই মাত্র এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো। ছাতা মাথা দাঁড়িয়ে অহনা অপেক্ষা করছে অরিত্রের জন্য। সাধারণত অরিত্র এতক্ষণ দেরী করে না। আজ কি যে হলো। রমনা বৈশাখী গেইটের সামনে একা দাঁিড়য়ে এই কথাই বার বার উঁকি দিচ্ছে অহনার। এর মধ্যে দেখতে পেল তার প্রাণের মানুষ আসছে দৌঁড়ে। মনে হলো পেছন থেকে কেউ তাড়া করছে। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ায় অহনার সামনে। ক্ষমা করো জান আমায়। রাস্তায় এত গাড়ির ভীড়। তারপর রিকসা ছেড়ে দিলাম অনেক দূরে। পায়ে হেঁটে এতটুকু। কি বিশ্বাস হলো? অহানা মুখে কোন কথাই বললনা। মুখটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।
– কি হলো জান! শিক্ষকতা করতে করতে তুমি আমার সাথে কঠিন আচরণ শুরু করলে।
-চলো,ওদিকটায় বসি। একটা মেয়ের একা অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কি তুমি বোঝ? এমনিতে আজ বৃষ্টির দিন। এছাড়াও রমনার এ দিকটায় লোকজনের চলাচল কম।
– ক্ষমা চাচ্ছিতো জান আর কখনো এমনটি হবে না। এই তোমাকে ছুঁয়ে বললাম, ক্ষমা করা যায়না আমায়?
নিজেকে সামলে নিয়ে অহনাই বলে ওঠে- তো তোমার লেখালেখির কি খবর? আর ওই চাকুরির কি হলো?
-লেখালেখি চলছে। তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নটা খুব কঠিন। দাঁড়াও ভেবে বলছি।
শোন,অরিত্র- জীবনটা তোমার গল্প উপন্যাস নয়,এটা বাস্তব। কঠিন স্বরে বলে ওঠে অহনা। দু’জনকে বাঁচতে হলে একটা ঘর থাকা চাই। দুজনের আর্থিক দিক ভালো থাকা চাই। তবেই না জীবন কাটবে আনন্দে। কি বুঝাতে পারলাম?
-কি হয়েছে আজ তোমার? কোথায় একট বসে বসে দু’জন মিলে বাদাম খাবো, না তুমি তোমার কঠিন কথা আমায় শোনাচ্ছ। মনে হচ্ছে তোমার ছাত্র ছাত্রীদের সামন লেকচার দিচ্ছো। এক কাজ করো অহনা আমাকে পেলে অন্য কাউকে বিয়ে করো। যার আছে বাড়ি, গাড়ি, অঢেল টাকা। শোন অরিত্র আমি এই পাচঁ বছর ধরে তোমার ছবি মনে আঁকছি তোমায় ছেড়ে দেবার জন্য। তিলে তিলে আমার ভালোবাসার বাগানে আমি অনেক চারা রোপন করেছি। যার পরিচর্যা করেছি এই পাঁচ বছর। গাছের ফুল না ফুটিয়েতো আমি ক্ষান্ত হচ্ছিনা। আমার বিশ্বাস,আমার ভালোবাসাতো এত ঠুনকো না যে খুব সহজে ভেঙ্গে যাবে। ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞা রচনা না করে আমি ছাড়ছি না। দেখ অরিত্র তুমি এই আমাকে চিনলে? অহনা আর নিজেকে সামলাতে পারে না। চোখ বেয়ে অশ্রুঝরে।
– আহা, জান তুমি কাঁদছো কেন, তোমাকে তো আসল ঘটনাই বলা হয়নি।
অহনা চোখ মুছে তারপর তাকায় অরিত্রের দিকে। হ্যাঁ বলো তোমার ঘটনা।
-এইতো আমার লক্ষী জান।
শোন কাল বিকেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমাদের এই নির্দিষ্ট স্থানে অনেকক্ষণ। তারপর তুমি জানালে আসতে পারবেনা। চলে যখন যাচ্ছিলাম  রাস্তায় দেখি একটা পিচ্ছি মেয়ে মৃত্যুর একদম দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছিলো। সামান্যর জন্য একটা চলন্ত গাড়ি তাকে পিষ্ট করেনি। নিজের জানটাকে বাজি রেখে মেয়েটাকে বাঁচালাম। তারপর তার বাবার মায়ের মুখে বিজয়ের হাসি দেখলাম। তারা তাদের অসাবধানতার কথা অকপটে স্বীকার করলেন। ধন্যবাদ দিলেন আমাকে। ধনী বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে অনেক সাধনার পর পাওয়া এই তাদের বুকের ধন। তাকে আমি বাঁিচয়ে দিলাম। ভদ্রলোক আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন তার ভিজিটিং কার্ড। আজ বিকেলে অবশ্যই তার অফিসে যেতে বলেছে। ভাবলাম তোমাকেও নিয়ে যাবো। জানো, কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি। বার বার চোখের সামনে ভেসে ওঠছিলো সেই দৃশ্য,সেই করুণ মুখ গুলো। সন্তানটা হারালে মা- বাবার কি হতো!
-আচ্ছা জান বলো তো এই ভিজিটিং কার্ডটা কি আমার চাকুরির ব্যবস্থা করে দেবে? ওখানে গেলে ভদ্রলোক হয়তো বলবেন আমি কি চাই!
– তোমার কি মনে হয় অহনা সম্ভবনা আছে?
– অহনা রমনার লেকের পানির দিকে একটা ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে বলে, হতে পারে  আবার নাও হতে পারে। অরিত্রের চুলগুলো এলোমেলো করে  দিয়ে বলে এবার আমাকে একটি কবিতা শোনাও। প্রতিদিন প্রিয়তমাকে নিয়ে একটি করে কবিতা লেখে অরিত্র। আজও তার ব্যতিত্র“ম ঘটেনি।
-কাল রাতে তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি।
‘ তুমি কাল এসো মোহিনী
সবুজ শাড়ি,সবুজ চুড়ি
আর সবুজ টিপ পরে।
আমি দেখবো তোমায় দু’চোখ ভরে।
তোমায় দেবো সবুজ স্বপ্ন, সবুজ ভালোবাসা…।’
পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদ পড়ে অরিত্রের মুখে। ওর আবৃত্তির কন্ঠস্বরে অহনার মন আনন্দে নেচে ওঠে। হাত রাখে অরিত্রের হাতে,অহনার শক্ত করে ধরে আছে। আর দু’ চোখ বেয়ে পড়ে আনন্দের অশ্রু…।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top