Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

যাতনার পাবকে সাগর জ্বলে ৩

: | : ১৬/০৯/২০১৩

আসলেই শিক্ষকদেরকে যেন আজ অনেকেই হেয় করে । শুধু তাই না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা গুরুদের “কাক ” বা ” কাউয়া “ব্যাঙ্গাত্‍ক নাম দিয়েছে । শিক্ষকদের অবমাননা অবজ্ঞাই আমাদের শিক্ষার আজ অবনতি ।

এখান থেকে হেঁটে হেঁটে স্টেশনে গেলাম । এখানকার দৃশ্য আমাকে মর্মাহত করল । কতক শিশু , কিশোর , কিশোরী , পাগল ,হতদরিদ্র , অসহায় নর ও নারী কয়েক স্তর ময়লাযুক্ত ছেড়া পড়ে শায়িত উন্মুক্ত মেঝেতে । এটাই তাদের বাসস্থান । তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঝড়-বৃষ্টি ,শীত-গ্রীষ্মকে বরণ করে নিয়েছে । মোট কথা এরা পথের মানুষ নামেই পরিচিত । আর এদের সন্তানদের নাম টোকাই । পেটের ক্ষিদা নিবারণের জন্য কাগজ ও পরিত্যক্ত জিনিস কুড়িয়ে বিক্রির মাধ্যমে ২-১ টাকা রোজগার করে । এর ফলে সমাজের ভদ্র সমপ্রদায় এমন নাম করণ করেছে । টোকাইদের নীচু মানুষ নামে স্বীকৃতি দিয়েছে সমাজের ঐ ভদ্র ব্যক্তিবর্গ । অনেক কোটিপতির কাছে এরা মানুষ নয় , ডার্স্টবিনের বর্জ্য । সামনে পড়ল একটি নিষ্পাপ ছোট শিশু । বয়স তিন থেকে সোয়া তিন হবে অনুমান করলাম । আদুল গায়ে একটি কলা খাচ্ছে যার অধিকাংশই পঁচা । তার নাকের শ্লেমা ( সর্দি ) সেই কলাতে মিশ্রিত হচ্ছে । আমি জানার অধির আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলাম , বাবু তুমি কি খাচ্ছ ? খুব জোরে উপর নিঃশ্বাসের দ্বারা শ্লেমা মুখে টেনে নিয়ে উত্তর দিল , ” কলা ” । ভাত খাওনি কেন ? ” ভাতা নাই ” । এ কথা শুনে আমার আঁখি থেকে জল আসার উপক্রম । বুঝতে আমার বাকি রইল না । এ মাসুম শিশুটার উদরে দিনে একবারও ভাত যায় না । একটু আধটু কলা , বিস্কুট এটা সেটা খেয়ে দিন অতিবাহিত করে । আমি অসহ্য বোধ করে হোটেল থেকে ভাত ও মাংসের ব্যবস্থা করে দিলাম । ভাত দেখেই শিশুটি হৃদয়ের আহ্লাদে মুচকি হাসি দিল । আমি আনন্দ অনুভব করলাম এ গর্বে যে , এক দন্ডের জন্য হলেও একটি অসহায় শিশুকে হাসাতে পারছি । যদিও আমার সাধ্য ছিলনা অনেককে হাসানোর । আমি উপলোব্ধি করলাম সকল জীব হাসতে জানে । কিন্তু দুঃখ কষ্ট আর অভাব নামের মস্ত বড় ভারি পাথর হাসিকে চাপা দিয়ে রাখে । এ শ্রেণির লোকেরা যে কেমন সুখে আছে ? তা কারও অজানা নেই । তাই সাক্ষাতকার নেয়া প্রয়োজন বোধ করলাম না ।

এর মধ্যেই জুম্মার সালাতের আযানের ধ্বনি কর্ণে পৌছিল । আমরা অনতিবিলম্বে মসজিদের পানে রহনা হলাম । এ শহরের বৃহত্তর মসজিদ , এটি তিন তলা বিশিষ্ট আয়তকার । মন কারানো অনেক নকশা ও কারুকার্যে পূর্ণ মসজিদটি । প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই আমি শান্তি অনুভব করলাম । সালাত শেষে দেখলাম , অনেকে ইমাম সাহেবের সাথে করমর্দন ও কোলাকুলি করছে । ইমাম সাহেবের চেহারা বেশ উজ্জ্বল ও মনোমুগ্ধকর । এক নজর দর্শনেই আমার হৃদয় সাক্ষ্য দিল , ওনি নিষ্পাপ । তাঁর নুরানী চেহারায় পাপের চিহ্ন আছে বলে মনে হলনা । আমার জীবনে প্রথম নুরানী চেহারার মানুষ যদি দেখে থাকি , তা হলো একমাত্র এই ইমাম সাহেব । কথায় কথায় আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা আর শব্দহীন মিষ্টি হাসি । আমার হৃদয় নিঃসন্দেহে স্বাক্ষ্য দিল , আমি সুখি ও চিন্তামুক্ত মানুষের খোঁজ পেলাম । খুশিতে আটখানা হয়ে সাক্ষাতকার নিয়ে হতভম্ব হলাম !
আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল । তিনি সারারাত জেগে জেগে অঝোড় নয়নে কাঁদে আর আল্লাহর নিকট পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করে । কারণ ক্ষমতা নেই হিসাব দিয়ে স্বর্গে যাবে । তাঁর ক্রদনের আওয়াজ আস পাশের সবাই শোনেন । স্বচোখে যখন তাঁর অশ্রু ঝড়ানোর কৃষ্ণ নালা দেখলাম । তখন নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম আর ভাবলাম । একজন বিখ্যাত আলেম পাপের ভয়ে আল্লাহর ডরে কাঁদে । আর আমি কি করছি ?

হৃদয় পূর্ণ চিন্তা নিয়ে লান্স করতে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম । সেখানে একজন ব্যক্তির খাবারের ধরণ দেখে একেবারে থ হলাম । লোকটির কি মোটাগাটা শরীর ! লম্বায় ছ’ফুটের অধিক হবে , আন্দাজ করলাম । গায়ের বর্ন উজ্জ্বল শ্যামলা । দাড়ি নেই , ইয়া বড় গোফ , চুল মাঝারি । সমুখে তার গেটা ছয়েক মুরগির রোষ্ট , গরু ও খাসি বাদ যায়নি । আর আস্তা ইলিশ মাছ গোটা পাঁচেক , তিনটি রুই মাছের মুন্ড । এক হালি ডিম আরও অনেক কিছু সবগুলো বললাম না । এ দেশে এমন খাদক মানুষ আছে !

স্বচোক্ষে দেখার সুযোগ না হলে হয়তো বা কখনই বিশ্বাস করতাম না । মন নিঃশব্দে ফিস ফিস কর্ণে বলছে , এই বুঝি সুখি মানুষ পেলাম ? সাক্ষাতকারে জিজ্ঞাসিলাম , আপনি কি দৈনিক এমন খানা ভক্ষণ করেন । না , আজ স্বল্প খাইছি । তাই ! হ্যাঁ ,আজ অন্য দিন অপেক্ষা রোজগার অল্প হয়েছে ,উদরের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারিনি । যা আয় হয় তা এই গুদামেই ভরে দেই ,হেসে হেসে অতি সহজে ব্যক্ত করল । অবাক দৃষ্টিতে তার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে শুধালাম , কেন ভবিষ্যত্‍ সঞ্চয় ? গাল ভর্তি হাসি দিয়ে বলল , যারা মানুষ তারা করুক , দিন রাত ভরে করুক । আমরা তো মানুষ না , আমাদের দরকার নেই । একি বলছেন ? আপনি যে মানুষ নন , কে বলেছে ? সকলে কয় । তাই জমি কিনে প্রাসাদ গড়ার অধিকার নেই । জীবন ভর খাস জায়গায় থাকতে হয় । আমাদের থেকে কুত্তার সৌভাগ্য বেশ অট্টালিকায় বাসের সুযোগ পায় । পরে অবগত হলাম উনি একজন মেথর । রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা বেশ কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত । যদিও আমার মতে বেঠিক মনে হয় ।

লান্স সম্পন্ন করে জয়নাল সাহেবের বাড়িতে লিফটের সহায়তায় দশম তলায় পৌছিলাম । এটি তাঁর নিজস্ব বাড়ি । ১৮ তলা ভবনটি এ শহরের একমাত্র বহুতল বিশিষ্টের ফলে বিশেষভাবে পরিচিত । সহস্র কোটি পতিদের মধ্যে তিনি অন্যতম । কিন্তু তাঁর সাক্ষাতকারে সুখ শান্তির লেশ খুঁজে পেলাম না । বিভিন্ন দুঃচিন্তার মধ্যেই কাটে চব্বিশ ঘণ্টা । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের , সম্পদ লুটের , সন্ত্রাস চাঁদাবাজের ইত্যাদি দুঃচিন্তা তাঁকে শান্তিতে ঘুমাতে চরম বাঁধা দেয় । তাই দৈনিক রাত্রে গোন্ডা খানেক নিদ্রার বড়ি খেতে হয় ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top