Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

আয়ান ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ড

: | : ১৭/০৯/২০১৩

Ian_Fleming,_headshot

একজন সাহিত্যিক তার কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করে থাকেন। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন চরিত্রের সৃষ্টি করেন। সেসব চরিত্রের মধ্যে কিছু চরিত্র সাহিত্য জগতে এক অনন্য স্থান অর্জন করে। সেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে লেখক-পাঠক উভয়েই এতটা মিশে যান যে গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ হিসেবেই মনে হয়। আসলেই এ রকম কিছু বিখ্যাত চরিত্র আছে যা বাস্তব জীবনের ভাণ্ডার থেকে তুলে নিয়ে সাহিত্যিক সাহিত্য ভুবনে আলোড়ন তুলেছেন। আজ সেই রকম একটি বিখ্যাত চরিত্রের কথা জানা যাক।

১৯৫২ সাল। ক্যারিবীয় উপকূলের জ্যামাইকা দ্বীপের গোল্ডনেয়ি শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিখ্যাত সাহিত্যিক ইয়ান ফ্লেমিং তার প্রথম উপন্যাস ‘ক্যাসিনো রয়েল’ লিখতে শুরু করেছেন। তিনি তার প্রথম উপন্যাস থেকেই একটি দুর্র্ধর্ষ নায়ক চরিত্র সৃষ্টি করতে চান। লিখা ‘শুরু হয়ে গেছে’ কিন্তু নায়কের নাম নিয়ে পড়লেন মহাসমস্যায়। মাথার মধ্যে অনেক নাম আসছে কিন্তু কোনোটিই মনমতো হচ্ছে না। জমকালো গম্ভীর কোনো নাম নয়, নিতান্ত সহজ-সরল সাধারণ একটি নাম তিনি খুঁজছিলেন। বিভিন্ন বইপত্র তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও যুতসই নাম পাচ্ছেন না!

বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় হঠাৎ একটি বইয়ের ওপর তার চোখ আটকে গেল। বইটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাখিদের নিয়ে লেখা। বইয়ের নাম ‘বার্ডস অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ’। লেখকের নাম খুব সাধারণ, আচমকা এই নামটি যেন ধাক্কা মারল তার বুকে। বইটির লেখকের নাম জেমস বন্ড।

আর পেছনে ফিরে তাকাননি ফ্লেমিং। জেমস বন্ড নামটিকে মূল চরিত্র বানিয়ে উপন্যাস এগিয়ে নিতে শুরু করলেন। তার পরের ঘটনা তো ইতিহাস। সর্বকালের প্রিয় চরিত্র হিসেবে স্থান করে নিল পাঠকের হƒদয়ে। ফ্লেমিং পরে রসিকতা করে বলেছিলেন ‘আমার উপন্যাস লেখার পেছনে সেরকম মহৎ কোনো কারণ নেই। ৪৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম, বুড়ো বয়সে বিয়ে করার সেই আঘাতটাকে কাটিয়ে ওঠার জন্যই বোধহয় উপন্যাস লিখতে শুরু করি।’

বন্ডের অভিযান যেন শুরু হয়েছিল ফ্লেমিংয়ের অবিবাহিত জীবনকে বিদায় জানাতে। নায়ক জেমস বন্ড তার অবিবাহিত জীবনকে বিদায় অভিবাদন জানিয়েছিল, কিন্তু তার স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংকে নয়। স্রষ্টা ফ্লেমিং এবং সৃষ্টি জেমস বন্ড, এই দুজনের মধ্যে অনেক মিল। যেন একজনকে ছাড়া অন্যজন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারত না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্লেমিং নৌবাহিনীর গুপ্তচর বিভাগের প্রধান পরিচালকের সহকারী ছিলেন। চাকরিসূত্রে বেশ কিছু গুপ্তচর এজেন্টকে তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন দুস্কো পোপোভ। পোপোভ জš§সূত্রে যুগোস­াভিয়ার লোক, কাজ করতেন ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগে। ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে তিনি গোপনে নাৎসি গুপ্তচরদের সঙ্গে মিশে যেতেন, সংগ্রহ করতেন জার্মানদের সব গোপন খবর। ব্রিটিশদের সম্বন্ধে ভুল খবর দিয়ে নাৎসি বাহিনীকে উল্টোপথে পরিচালিত করতেন।

অন্যদিকে ব্রিটেনের ‘ডাবল এক্স’ কমিটির প্রাণ ছিলেন এই দুস্কো পোপোভ। ডাবল এক্স কমিটি নামের মধ্যেই তার কাজ-কারবারের রহস্য লুকিয়ে আছে। ইংরেজি ‘ডাবল ক্রসিং’ কে বাংলা করলে দাঁড়ায় দ্বৈত ভূমিকা। নাৎসি গুপ্তচর বাহিনীর সঙ্গে মিশে যাবে কিছু ব্রিটিশ এজেন্ট, ভুল খবর দিয়ে তারা নাৎসি বাহিনীকে ঠেলে দেবে বিপর্যয়ের মুখে। উপন্যাসের বন্ডের মতো বাস্তবের এই বন্ড দুস্কো পোপোভ খুব বিপজ্জনকভাবে বাঁচতেন। রাজকীয় জীবনযাপন করতেন। আর কর্মদক্ষতা ছিল অসাধারণেরও অসাধারণ। আশ্চর্যরকম দক্ষতায় তিনি সব বাধা দূর করতেন।

একসময় ফ্লেমিং পোপোভকে ক্যাসিনোতে দেখেছিলেন। তীক্ষœ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জুয়ার চাল দিতেন পোপোভ। রুলেত টেবিলেই তিনি প্রমাণ করে দেন, জীবন নিয়ে জুয়া খেলতেও তিনি বিন্দুমাত্র পিছপা নন। আর আমাদের গল্পের জেমস বন্ডের অভিযানও শুরু হয়েছিল ক্যাসিনো থেকে।

১৯৭৪ সালে দুস্কো পোপোভ একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ছিল ‘স্পাই-কাউন্টারস্পাই’। ঘটনার ঘনঘটা, মৃত্যুমুখে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাসহ পোপোভের জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। বন্ডের মতো পোপোভও বিপদের মুখে স্থির, অবিচল থাকতেন। পোপোভ লিখেছেন, ‘আমি শুনেছি আমার অভিজ্ঞতা ও জীবনের ওপর কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ভিত্তি করে ইয়ান ফ্লেমিং জেমস বন্ড চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। জেমস বন্ড রক্তমাংসের মানুষ হলে গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়ায় ৪৮ ঘণ্টাও বেঁচে থাকতেন কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। এই পৃথিবীতে পদে পদে মৃত্যু আর বিপদের হাতছানি।’

ইয়ান ফ্লেমিং রচিত গল্পগুলোর পটভূমিতে জেমস বন্ড চরিত্রটি নির্দিষ্ট বয়সের নয়। সচরাচর চরিত্রটি ত্রিশোর্ধ্ব বয়সী এক যুবকের। মুনরেকার উপন্যাসে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়।

জেমস বন্ডকে ইউ অনলি লাইভ টুয়াইস চলচ্চিত্রে স্কটিশ পিতা অ্যান্ডরু বন্ড এবং সুইস মাতা মনিক ডেলাক্রইক্সের সন্তান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কৈশোরকাল থেকেই জেমস বন্ডকে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। পিতা একটি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন বিধায়, জেমসও জার্মান এবং ফ্রেঞ্চ ভাষা শিক্ষালাভে সক্ষম হয়েছিলেন। চ্যামোনিক্সের কাছাকাছি আইগুইলস্? রোগেসে পর্বত আরোহণের সময় তার বাবা মারা যান। অনাথ অবস্থায় জেমস বন্ডের তখন বয়স ছিল এগারো বছর।

অন হার ম্যাজিস্ট্রিজ সিক্রেট সার্ভিসে বন্ডের পরিবারের মূল লক্ষ্য হিসেবে ল্যাটিন বাক্য ‘অরবিস নন সাফিসিট’ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। ইংরেজিতে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘দি ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ বা পৃথিবীই যথেষ্ট নয়। ইয়ান ফ্লেমিং ২৮ মে ১৯০৮ সালে লন্ডনের মেফেয়ারে জš§গ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ইভেলিন সেন্ট ক্রোইক্স রোজ এবং বাবার নাম ভ্যালেন্টাইন ফ্লেমিং। লন্ডনের এটন কলেজে থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন ফ্লেমিং। ১৯৫২ সালে ফ্লেমিং তার প্রথম উপন্যাস ক্যাসিনো রয়াল লেখা শুরু করেন। মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপানে অভস্ত ছিলেন।  ১৯৬৪ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top