শরীর যখন ক্যানভাস
নিজেকে অন্যের কাছে আবেদনময় এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনার জন্য গায়ে এঁকে নিচ্ছেন ট্যাটু কিংবা উল্কি। আসলে ট্যাটু এক ধরনের আর্ট বা শিল্প। অমোচনীয় কালি দিয়ে শরীরের ত্বকের উপরের অংশে আঁকা হয়। পৃথিবীজুড়েই বিভিন্ন দেশে ট্যাটুর প্রচলন রয়েছে। তুরস্ক, ফিলিপাইন, জাপান, উত্তর আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে শরীরে ট্যাটু আকার প্রচলন রয়েছে।
বাংলাদেশে অবশ্য ট্যাটু বা উল্কির আগমন ঘটেছে এই তো কিছুদিন আগে। নব্বই দশকের শুরুতে বিদেশ ফেরত কিছু মানুষের হাতে ট্যাটু বা উল্কি দেখা গিয়েছিল। পরে অবশ্য তা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ফুলহাতা শার্টের ভাঁজে সমাজের অন্যদের বাঁকা চোখের কারণে। তারপর বেশ কিছুদিন পর আবার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ট্যাটু বিষয়টি। শুধুমাত্র হাতই নয়, পা থেকে শুরু করে শরীরের নানা জায়গায় ট্যাটু এঁকে ঘুরতে দেখা যায় অনেক ছেলেমেয়েকে।
ড্রাগন, বৃশ্চিক বিভিন্ন বিপ্লবী নেতার প্রতিকৃতি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছু যেমন ফুল, পাখি, প্রজাপতি, ফল ইত্যাদির ছবি ধরা দেয়া ট্যাটু হিসেবে। বিশ্বখ্যাত বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারার প্রতিকৃতি অনেকেই হাতে বা বুকে এঁকে নিচ্ছেন। চের প্রতিকৃতির ট্যাটু পৃথিবীজুড়েই বেশ জনপ্রিয়। ইউরোপে তরুণ-তরুণীরা বিমূর্ত ট্যাটুর প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। তারা পুরো পিঠ এমনকি সারা শরীরে বিমূর্ত ছবি এঁকে দিব্যি শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের শোবিজের বেশ ক’জন জনপ্রিয় তারকার বাহুতে ট্যাটুর উপস্থিতি চোখে পড়ছে। তাদের অনুকরণে অনেক তরুণ-তরুণীই এখন ট্যাটু কালচারে ঝুঁকছেন। ছোট্ট শিশুদের মধ্যে ট্যাটু সংস্কৃতির প্রচলন করেছে। বিভিন্ন বাবলগাম আর পিপস প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। তারা চিপস এবং বাবলগামের সঙ্গে ফ্রি ট্যাটু স্টিকার দিচ্ছে বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে। ট্যাটু স্টিকারগুলো শিশুরা হাতে বা গালে পানি দিয়ে ভিজিয়ে লাগিয়ে রঙিন চমৎকার ট্যাটুর ছাপ নিতে পারছে। যদিও এগুলোর স্থায়িত্ব খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। একবার দু’বার ধোয়ার পর সেই সব ট্যাটু মুছে যাচ্ছে শিশুদের শরীর থেকে। বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও বিজ্ঞানসম্মত ও ঝুঁকিমুক্তভাবে ট্যাটু বা উল্কি আঁকানোর উপায় ছিল না। বর্তমানে এখানে সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন বেশ কিছু পার্লারে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ট্যাটু আঁকার কাজ। রাজধানী ঢাকা শহরের হাইলাইটস ভিআইপি সেলুন, রেড, বিন্দিয়া, শীলা’স মেকওভার, ফারজানা শাকিলস ও পারসোনাসহ বেশ কিছু পার্লারে রয়েছে এ ধরনের ব্যবস্থা। বর্তমানে শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তভাবে ও ব্যথাহীন অবস্থায় সম্পন্ন করা হয় যে কোনো বয়সী নারী-পুরুষ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শরীরে ট্যাটু এঁকে নিতে পারেন। এতে শরীরের সৌন্দর্যবর্ধন অবশ্যই হয়। শরীরে ট্যাটু আঁকতে বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়। এ জন্য বেশ কিছু ডিজাইন বা নকশা রয়েছে নির্ধারিত। পার্লারে গেলে তারা সেই নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী অথবা এর বাইরে কেউ চাইলে তার ইচ্ছামতো নকশা করে দেয়া হয়।