Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সত্যিকারের রবিনসন ক্রুশো

: | : ১৭/০৯/২০১৩

1

ড্যানিয়েল ডিফোর বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুশোর নাম অনেকেরই জানা। ১৭১৯ সালে এই উপন্যাস প্রথম প্রকাশিত হয়। রবিনসন ক্রুশো নামে এক ব্যক্তির কাল্পনিক আÍজীবনী আকারে উপন্যাসটি রচিত। ভেনিজুয়েলার কাছে এক নির্জন দ্বীপে ২৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করেন রবিনসন। এই সময় আমেরিকার উপজাতি, বন্দি ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।

আলেকজান্ডার সেলকার্ক নামে এক স্টটিশ ব্যক্তির জীবনের বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ড্যানিয়েল ডিফো এই উপন্যাস রচনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। সেলকার্ক চিলুর ম্যাস আটিয়েরা নামে একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে চার বছর অবস্থান করেছিলেন। যদিও ক্রুশোর দ্বীপটির বিবরণ সম্ভবত ক্যারিবিয়ান টোবাগো দ্বীপের বর্ণনা অনুযায়ী লেখা হয়। কারণ, এই দ্বীপটি ওরিনোকো নদীর মোহনার কাছে ভেনেজুয়েলান উপকূলের কিছুটা উত্তরে এবং ত্রিনিদাদ দ্বীপের কাছে অবস্থিত। অনেকে মনে করেন ডিফো ইবনে ইয়ুফাইলের লেখা হ্যায় ইবন ইয়াকধন উপন্যাসটির ইংরেজি ও প্যাটিন অনুবাদ থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই উপন্যাসটি একটি নির্জন দ্বীপের পটভূমিকায় লেখা হয়েছিল।

১৭০৩ সালে আলেকজান্ডার সেলকার্ক একটি সরকারি যুুদ্ধজাহাজের নাবিক হিসেবে যোগ দেন। সে বছর সেপ্টেম্বরে তার জাহাজ দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পৌঁছে। সেখানে যাওয়ার পর সেলকার্ক ক্যাপ্টেনকে বললেন, হুয়ান ফার্নান্দেজ দ্বীপে নামিয়ে দিয়ে যান। ক্যাপ্টেন রাজি হয় না, সেলকার্কও নাছোড়াবান্দা। তাকে দ্বীপে নামিয়ে দেয়া হলো। শেষ মিনিটে সেলকার্ক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন এই ঝগড়াটে অফিসারকে আর জাহাজে তুলতে চাইলেন না। সেলকার্ককে একা রেখে জাহাজ চলে গেল। জাহাজের উঁচু মাস্তুলটা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত সেলকার্ক জাহাজটাকে চলে যেতে দেখলেন। তারপর ঘুরে হুয়ান ফার্নান্দেজের দিকে তাকালেন। প্রতিজ্ঞা করলেন, নিঃসঙ্গতার কাছে হার মানবেন না। চরম ক্ষুধা তাকে বিক্ষিপ্ত করে তোলে। তিনি তার মাসকিট লোড করে খাবারের খোঁজে গেলেন। দীর্ঘদিন আগে বসতি স্থাপনকারীরা কিছু প্রাণী যেমন ছাগল ছেড়ে রেখেছিলে দ্বীপটায়। ওই রাতে সেলকার্ক স্রোতে ভেসে আসা কাঠের টুকরোয় আগুন ধরিয়ে আহারপর্ব সারলেন। একটি গাছের বড় বড় পাতা, যাকে তিনি বাঁধাকপি নামে ডাকতেন, ওটার সবজি রাঁধলেন। খাওয়ার পর তিনি ঘুমে ঢলে পড়লেন। রাতের বেলা ঠাণ্ডায় তার ঘুম ভেঙে গেল। তবে তিনি শুধু ঠাণ্ডায় জেগে ওঠেননি। কিছু একটা তার পা ধরে টানছে যেন। ঘুমের ভেতর তিনি গায়ের চাদরটা তুলে দেখলেন একটা বড় চকচকে বাদামি রঙের ইঁদুর তার জুতো খাচ্ছে। তিনি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, ইঁদুরগুলো এদিক-ওদিক ছুটে পালাল। বাকি রাতটুকু তিনি আর ঘুমাতে পারলেন না।

 

ভোর বেলা তিনি ইঁদুর থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা খুঁজে বের করলেন আর কীভাবে নিঃসঙ্গতাকে সহনীয় করা যায় তাও খুঁজে দেখলেন। ছাগলের মাংসের টুকরো ব্যবহার করে দ্বীপের বেশ কিছু বিড়াল তার শিবিরে নিয়ে এলেন। এরপর দেখা গেল, তার ঘুমের সময় প্রায় ১০০ বিড়াল তাকে পাহারা দিত। তিনি ওদের সঙ্গ পছন্দ করতেন। ওদের উদ্দেশে গাইতেন গান এবং কিছু একটা পড়ে শোনাতেন। নিঃসঙ্গ সপ্তাহগুলো পেরিয়ে বছর হতেই সেলকার্কের পরনের পোশাক শতছিন্ন হয়ে গেল, পায়ের জুতো টুকরো হয়ে গেল। একবার শিকার করতে গিয়ে তিনি মরতে বসেছিলেন। তিনি একটা ছাগলকে পাহাড়ের চূড়ায় কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন। ওটাকে ধরার জন্য লাফ দিতেই দুজনই ঝোপের ভেতর গিয়ে পড়লেন। সেলকার্ক আতঙ্কিত হয়ে দেখলেন, তিনি নিচে পড়ে যাচ্ছেন। ঝোপটা গিরিথাতাকে প্রায় আড়াল করে রেখেছিলেন। তিনি হয়তো মারাই যেতেন। কিন্তু ছাগলটা তার পতনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল। নিজের জীবন দিয়ে সেলকার্ককে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল।

 

ওই দ্বীপে চার বছরের বেশি সময় থাকার পর সেলকার্ক তার অতি আকাক্সিক্ষত দৃশ্য দেখতে পেলেন দুটি ব্রিটিশ জাহাজের মাস্তুলের চূড়া। তিনি আগুন জ্বালালেন এবং দেখতে পেলেন একটা নৌকা দাঁড় বেয়ে তীরের দিকে রওনা দিয়েছে। কিন্তু তাকে আবার আতঙ্কিত করে নৌকাটি ফিরে যেতে লাগল। মরিয়া হয়ে তিনি আগুনে আরো কাঠ দিলেন। আগুনের শিখা মাথা ছাড়িয়ে গেল। কিন্তু নৌকাটি সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

 

ওরা কি তার সিগন্যাল ধরতে পারল না? আসলে নাবিকরা সেলকার্কের আগুন দেখেছিল। কিন্তু ওরা ওটাকে স্প্যানিশ আগুন ভেবে ভুল করে। দুদিন পর তারা তাকে উদ্ধার করে। দ্বীপের রাজা সেলকার্ক তখন একটি দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। লম্বা দাঁড়ি এবং ছাগলের চামড়ার পোশাকে তাকে বন্য লাগছিল। তখনো তিনি জানতেন না যে, ডিকোর উপন্যাস তার মতোই একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বিশ্ববাসীর যার নাম রবিনসন ক্রুশো।

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top