সামিনা ও নুরুদ্দিন এর জীবন পাল্টে গেল
পূর্ব প্রকাশিতের পর (পর্ব ৩)
মার স্নেহময় হাসি দেখে সামিনার মনের সব মেঘ কেটে গেল l মাকে কাজে সাহায্য করতে গেল l
তোর্ পড়া আবার ভালো করে পড়, তোর্ জন্য ভাত বসায় দেই, ভাত খাইয়া যাইস l
তোমার এত কষ্ট করা লাগবনা মা, একটু মুড়ি দাও,পরীক্ষা দিয়া আইসা ভাত খাব l
আটটার মধ্যে রেডি হয়ে পরীক্ষার দেওয়ার জন্য কলেজ এর দিকে রওয়ানা হলো.
একটা নারী কন্ঠের আর্তনাদ শুনে নুরুদ্দিন তার পিছন পিছন দৌড়াতে সুরু করলো. জঙ্গলে কাটা গাছে তার হাত কেটে যাচ্ছে, পা ছিড়ে গেছে , কিন্তু তার কোনো দিকে খেয়াল নেই, মনে হচ্ছে এ কন্ঠস্বর অনেক পরিচিত l
হটাত নারী টি তার দিকে পিছন ফিরে তাকালো, আত্কে উঠলো নুরুদ্দিন, এ কি মুখ দেখল? সবুজ রঙের এক করুন মুখ, মুখ টা করুন স্বরে বলছে
ভাইজান আমারে বাচান, কিন্তু শুনতে শুনতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে l
ধর মর করে ঘুম থেকে উঠে বসলো, কি অলুক্ষণে সপ্ন রে বাবা, শয়তান এর দেখানো সপ্ন ,তারপর ও উঠে তাড়াতাড়ি দুই রাকাত হাজাত নামাজ পড়ল l
হটাত চমকে গেল এ কথা মনে করে সপ্নের মেয়েটির মুখ সামিনার মুখ, তার প্রিয় ছোট বোন্ টি l
আহারে অনেকদিন দেখা হচ্ছেনা ,এই শুক্রবার চৌধুরী সাহেব রে বলে তিনদিনের ছুটি নিয়ে মা আর বোনরে দেখে আসব, এ ভাবছে l
আজকে সামিনার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, মন টা হালকা লাগছে, এখন বাজে পাচটা, বাড়ির দিকে রওয়ানা হচ্ছিল, কলেজ থেকে তার বাড়ি প্রায় দুই মাইল এর রাস্তা, আজকে কোনো রিকশা দেখা যাচ্ছেনা , সে হেটে বাড়ির দিকে রওয়ানা করলো l
কে জন পিছন থেকে ডাকছে মনে হলো, তাকাতে দেখল, একটা ছোট ছেলে খালা খালা বলে চিত্কার করতে করতে ছুটে আসছে তার দিকে, কাছে আসতে চিনতে পারল আমিনা বুবুর ছোট ছেলে
তোমারে মা ডাকে বলে হাত ধরে টানা সুরু করলো,
নারে তোর্ মারে বল আজকে না, মা চিন্তা করব, আরেকদিন মারে নিয়া আসব.
দূর থেকে আমিনা বুবুর কথা শোনা গেল, সামিনা একটু এদিকে আয় কতক্ষণের জন্য
অগত্যা যেতে ই হলো বুবু মা চিন্তা করব , থাকতে পারবনা
থাকা লাগবনা খালাম্মা র জন্য একখান কাপড় রাখছিলাম দাড়া,
সামিনা অপেক্ষা করে আছে আমিনা বুর কোনো খবর নাই, আর কিছুক্ষণের মধ্যে ই সন্ধ্যা হয়ে যাবে l
আমিনা বুবু ও আমিনা বুবু বলে জোরে জোরে ডাকতে ডাকতে আমিনা ছুটে এলো,
আয় তোর্ জন্য খাওয়ার বাড়ছি, রানতে গিয়া দেরী হইলো,
সন্ধা হই গেছে আমি খাইতে পারুমনা,
চিন্তা করিস না তোরে হাসান পৌছায় দিয়া আসব,
ও নুরু ভাই ফোন করছিল, ফোন তোরে চাইছিল, তোর্ কাছে আনতে আনতে ফোন কাইটা গেল, অন্যর ফোন দিয়া করছে তো এজন্য এখন আর করতে পারতেছেনা l
ভাইজান কি এখনো তোমারে ফোন করে ? কেন করে? সন্ধিগ্ন স্বরে সামিনা জিজ্ঞাসা করে l
হা পেত্তেক দিন করে খিলখিল করে কিছুক্ষণ হাসলো আমিনা, ভয় পাসনা , এই প্রথ্ষম ফোন করলো আমার বিয়ার পর. তোরে নিয়া খুব টেনশন করতেছিল, বাড়িতে ফোন দিয়া না paiya এখানে ফোন দিছে, কি নাকি বাজে খোয়াব দেখছে তোরে নিয়া l
আমিনা বুর বাড়ি থেকে বের হতে হতে একেবারে সন্ধা হয়ে গেল এই সন্ধার সময় বের হতে মন খচ খচ করতেছে, মার চিন্তা করে আল্লাহ র নাম নিয়ে বের হয়ে পড়ল l
খালারে ফোন করি তুই আমার লগে থাকবি বলল আমিনা l
সামিনা থাকতে রাজি হয়নি মায়ের শরীর এর কথা মনে করে.
আমিনার দেবর জামিল এর জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে আরো দেরী হইলো,
রাত ৮ টা বাজে. নুরুদ্দিন নিজের হাতে রান্না করেছে, কই মাছের যোল, ইলিশ মাছ, রাকিব আর জাহিদ এসেছে ওরা খেতে বসেছে.
নুরুদ্দিন নিজের হাতে তাদের কে খাওয়া বেড়ে দিচ্ছে, আর বলছে আপনারা আমার ছোট ভাই এর মত.আপনাদেরকে মনে মনে অত্যাধিক পছন্দ করি, আপনারা দয়া করে এই বিপদের কাজ টা ছাইরা দিয়া পরা লিখা শেষ করেন. তারাও মাথা নেড়ে এটা সাপোর্ট করলো.
হা নুরুদ্দিন ভাই আমি আজকে রাকিব রে বলতেছিলাম এরকম করে আমরা আমাদের ভবিষ্যত নষ্ট করতেছি, আমার বাবার কষ্টের টাকা দিয়ে হোস্টেল এ থাকতেছি, পড়ালিখা না করে এসব করলে বাবারে কি জবাব দিব..
হা নুরুদ্দিন ভাই..জানেন আপনি আমার বড় ভাই এর মত দেখতে সুধু ভাই এর দাড়ি নাই, চুল চোখ, চেহারা সব আপনার মত, আমার বাবা নাই, বড় ভাই আমাদের সংসার চালায় বলে শার্ট এর হাতায় সে তার চোখ মুছলো.
নুরুদ্দিন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, খাও খাও ঠিকমত খাও, আমারে যখন বড় ভাই এর মত বলছ, আমার কথা শুনো, এ পথ থেকে সরি আস. আল্লাহ এর উপর ছাড়ি দাও সব
এসময় পুলিশ এর হুইসেল এর শব্দ, তারা সারা মাদ্রাসা গিরে ফেলেছে. পুলিশ এসে দুজনের হাতে হেন্ড কাপ পরিয়ে দিল. সার্জেন্ট বলল, “ধন্যবাদ নুরুদ্দিন সাহেব সহযোগিতা করার জন্য
নুরুদ্দিন এর মাথা একেবারে নিচু হয়ে গেল, তার থুতনি বুকের সাথে লেগে গেছে. সে তাকাতে পারলনা রাকিব, জাহিদ দুজনের দিকে.
রাকিব সুধু এটা বলতে পারল, আপনারে আমি ভাই ডাকছি আমারে আপনি পুলিশ এ ধরায় দিলেন
নুরুদ্দিন এ কথার জবাব দিতে পারলনা, দপ করে বিছানায় বসে পড়ল, তার বুক থেকে সুধু একটা নিশ্বাস বের হলো বলল হে আল্লাহ এদের রক্ষা কর
রাকিব আর জাহিদ কে পুলিশ গাড়ি থানার দিকে যেতে থাকলো
রাকিব জাহিদ কে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নুরুদ্দিন সেই যে সিজদায় পড়েছে, রাত তিন টা বাজছে, তার কোনো খেয়াল নাই, কান্নার দমকে তার শরীর কেপে উঠছে l
হে প্রভু দ্বীন দুনিয়া আর আখেরাত এর মালিক এই দুই টা বাচ্চা কে তুমি রক্ষা কর l সারারাত সিজদায় পরে রইলো l
পরদিন সকালে মাদ্রাসায় পড়াতে এসে নুরুদ্দিন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছে না l থেকে থেকে সে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে l বার বার মনে পরছে রাকিব এর কথা “আপনি আমার ভাই এর মত দেখতে l এতই তার মন খারাপ লাগতে লাগলো সে না পারল কোনো কিছু খেতে, না পারল কোনো কাজে মনোযোগ দিতে l
ঘরে বাহিরে পায়চারী করতে করতে সে একপর্যায় ভীষণ ক্লান্ত বোধ করলো l সে বুজতে পারলনা কি করলে তার এই ভীষন্নতা কাটবে l
হুজুর হুজুর জামাল চিত্কার করতে করতে ছুটে আসছে, কিরে বেটা কি খবর?
আপনের ফোন , জামালদের নম্বর মারে দিছে কোনো জরুরি দরকার হলে ফোন করতে ,
ফোন কানে নিতে ওপাশ থেকে মায়ের গলা.
বাবা নুরুদ্দিন তুমি কেমন আছ ? তোমারে নিয়ে বড় খারাপ খোয়াব দেখছি গো বাবা
একটা মুরগি ছদকা দিয়ে আসলাম মাত্র.
আমি ঠিক আছি আম্মা, আপনার শরীর কেমন? সামিনার পড়ালিখা কেমন চলের? ওরে ডাক্তর দেখায়ছ?
ঐতো সামিনা পাশে আছে কথা ক
ভাইজান আপনি কেমন আছেন? আমি আপনার জন্য আজকে রোজা রাখছি l
শোকর আলহামদুলিল্লাহ , বোন তোমার শরীর কেমন আছে ? তোমার কি কিছু লাগব?
না ভাইজান কিছু লাগবনা, আপনের শরীর এর দিকে খেয়াল রাখেন l
ফোন রাখার পর মনস্থির করে ফেলল না আর না, এক্ষনি জেল এ যাবে, রাকিব আর জাহিদ এর সঙ্গে দেখা করে আসবে l টিফিন বাক্স এ করে কালকে রাতের সব মাছ, ভাত গুছিয়ে নিল.
আহারে ওরা ঠিকমত খেতে ও পারলনা l
দেখি পকেট এ কত টাকা আছে l ১৪৫ টাকা সুধু, পরোটা কিনলো, কলা, আর চা, চল্লিশ টাকা চলে গেল.
এই ভাই রিকশা ওয়ালা সামনের থানা তে যাব, যাবেন?
জি হুজুর, কত দিমু আপনারে
২৫ টাকা , মন খারাপ হয়ে গেল নুরুদ্দিন এর, রিকশা নেওয়া যাবেনা, তাহলে ওদের হাতে যে ১০০ টাকা দিবে ভাবছে সেটা দেওয়া যাবেনা. অগত্যা সে হেটে যাওয়া স্থির করলো l
কিছু দূর হাটার পর শুনতে পেল পিছন থেকে কেউ ডাকছে,
হুজুর আসেন, আপনারে নামাই দেই l কিছুক্ষণ আগের সেই রিকশা ওয়ালা
না ভাই ঠিক আছে এটুকু রাস্তা হাটতে হাটতে চলে যাব l
এত রাস্তা কিভাবে হাটবেন হুজুর? আপনার টাকা দেওয়া লাগবনা হুজুর , উঠেন হুজুর উঠেন
কুন্ঠিত ভাবে নুরুদ্দিন রিক্সায় এসে বসলো l
অপর নাম কি ভাই রিকশা ওয়ালা ভাই?জিজ্ঞাসা করে নুরুদ্দিন
জলিল হুজুর
কে কে আছে বাড়িতে ?
এক মা ছিল, মইরা গেছে.
থানায় পৌছে পকেট থেকে ৫ টাকা বের করে রিকশা ওয়ালা কে দিল খুব লজ্জার সাথে
ভাই আমার কাছে আর আপনারে দেওয়ার মত কোনো টাকা নাই বলল কুন্ঠিত ভাবে.
এই টাকায় হবে হুজুর, দেন বলে সালাম দিয়ে রিকশা ওয়ালা চলে গেল l
থানায় এসে যা শুনলো নুরুদ্দিন তার মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা l
থানা য় যাওয়ার পথে তাদের সাথে পুলিশ এর দস্তাদস্তি হয়, জাহিদ এক পুলিশ এর বন্দুক কেড়ে নেয়, তার গুলিতে দুজন মারা যায় এবং পাল্টা পুলিশ এর গুলিতে সে নিহত হয় l রাজীব এর পায়ে গুলি লাগে এবং সে এই অবস্থায় এক পুলিশ এর বন্দুক দিয়ে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় l কথাগুলি বলছিল মহম্মদ l
হুজুর আপনি একটু সতর্ক থাকবেন l রাকিব হয়তবা আপনার ক্ষতি করতে আসতে পারে l
নুরুদ্দিন তা নিয়ে মোটে ও ব্যস্ত হলনা, আবেগ আর কান্নার দমকে তার শরীর কাপছে
জাহিদ মারা গেছে , জাহিদ মারা গেছে…
(পরবর্তিতে )