পুনে (ইন্ডিয়া)…… ভ্রমন (২য় পর্ব)…….
প্রথমেই বলেছি এটা আমাদের অফিসিয়াল ট্যুর । আমাদের মুম্বে থেকে পুনে আসা যাওয়া এবং থাকা খাওয়া সব ফ্রি ছিল । ওখানে যেয়ে একটা সিম কার্ড কিনতে পারিনি । । যাই হোক, তারপরও ভালই কেটেছিল দিনগুলো ।
ঢাকা বিমান বন্দর থেকে জেট এয়ারওয়েজ 9w275 বিমানে করে বেলা ১ টায় রওয়ানা হয়েছিলাম । প্রায় আড়াই ঘন্টা পর মুম্বাই ছত্রপতি শিবাজি এয়ারপোর্টে গিয়ে অবতরণ করি ।
আমি শুনেছি আমাদের ভিসা লাগেনি । আর আমি এত্ত কিছু বুঝিও না । সবার সাথে ছিলাম এই যা । স্যাররাই সব ব্যবস্থা করেছিলেন ।
গত পর্বে প্লেনের ভিতরের ছবি দেইনি কারণ যাওয়ার সময় আমি তেমন ছবি উঠাইনি । আমার ক্যামেরা দিয়ে যাকে তুলতে বলেছিলাম সে তেমন ভাল উঠায়নি ছবি ।
তারপরও দুইটা ছবি দিলাম । তবে আসার পথে ছবি তুলেছি……. সেগুলো পরবর্তী পর্বে দিব বলে ভাবছি ।
১। বিমানের ভিতর (আমাকে আংশিক রাখছি )
২। আশাকরছিলাম বিমান বালা দেখুম সুন্দর সুন্দর । হায় আল্লা এ যে দেখছি বিমানবা……. কি যে বলে ছেলে বিমানবালাদের তাতো জানি না…. তবে ছেলেটা সুন্দর ছিল
বিমান থেকে নেমে আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেড়ে…….. এসি বাসে করে (যা এনআইবিএম আমাদের জন্য পাঠিয়েছিল) পুনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । বিমান বন্দর থেকে বের হতেই দেখি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে…… (আমি কিন্তু প্রতিটা মুহুর্তই ক্লিকাইয়া ধরে রাখার চেষ্টা করেছি । আপনারা কিন্তু বোরিং ফিল করবেন না তাহলে আমার মন খারাপ হবে ) ।
৩। কি সব যন্ত্রপাতি লাগাইছে দেখলে ভয় লাগে……..
৪। মুম্বে থেকে পুনে যেতে যেতে যে কত ফ্লাইওভার দেখলাম তার ইয়ত্তা নেই । তবে সুন্দর লাগছিল রাস্তাঘাট । কেমন ফাঁকা ফাঁকা…….. দেখেন…… (সব ছবিই কিন্তু এসি বাসের গ্লাসের ভিতর থেকে নেয়া তাই তেমন স্পষ্ট ছবি আনতে পারি নাই………)
৫। পাহাড়ের শুরু…. কি সুন্দর যে লাগছিল সবুজ পাহাড়গুলোকে……. কোন পাহাড়ে দেখলাম গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে দেখছি বৃষ্টি নাই……. আবার কোথাও সূর্য উঁকি দিচ্ছে/ডুবে যাচ্ছে…… তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় ।
৬। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাচ্ছি……..
মুম্বাইকে যা দেখলাম……….. এত পুরাতন বাড়িগুলো আর এত নোংরা কি আর বলব । এক বড় আপা বললেন । শাহরুখ খান সম্বন্ধে ধারণা পাল্টে গেল । শাহরুখ খানের শহর এত বিশ্রি আর নোংরা । এক্কেরে যাচ্ছে তাই অবস্থা । পুরাতন বাড়িগুলো মধ্যে আবার এসিও আছে দেখা যায় । মুম্বে শহরটা আসলেই কেমন জানি ঢাকার মতই ।
পাথরে পাহাড়ের মধ্যে যখন বাস যাচ্ছিল তখন জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট ঝর্ণা দেখতে পাই । খুব সুন্দর লাগছিল । ভাল লাগছিলও অনেক ।………. রাতের বেলা পাহাড়ের পাহাড় দেখে বড় আপু বলে আরে এক পাহাড়ই দেখি ঘুরে ফিরে আমাদের আশে পাশে চলে আসছে…….. পাহাড় আসলেই আমরা সবাই বলতেছি আপা দেখেন দেখেন এই যে আপনার পাহাড় আবার এসে গেছে ।
৭। যাচ্ছি পুনের উদ্দেশ্যে…….
৮। পথে একটা সুন্দর স্টেডিয়াম দেখতে পেলাম…… চলন্ত ছবি উঠানো বেশ ঝামেলা আর কষ্টের কাজ
৯। কি সুন্দর ফাঁকা রাস্তা…….. কিন্তু কিছুদুর যেতেই… বাস থেমে গেছে আর স্টার্ট নিচ্ছে না । আজব তো এখন কিভাবে কি হবে কেহই বুঝতে পারছিলাম না । অনেকক্ষন ধরে থেমে আছে বাস । তখন এক ট্রাফিক আসলো তার সাথে ড্রাইভার কি যেন আলাপ করল । ট্রাফিক বাসে উঠে আমাদেরকে বলে সব লাড়কো লোগ বাসসে উথড়িয়ে বাসকো ধাক্কা লাগানিহে । বাস ষ্টার্ট নেহি হোতা জি…… প্লিজ প্লিজ উথড়িয়ে ।
আমরা মেয়েরা সবাই হু হু করে হেসে দিলাম । কার পেটে কত হাসি…….. জীবনে তারা ঢাকায় বা দেশে মনে হয় গাড়ীরে ধাক্কা লাগায় নাই
। আর বিদেশ বিভুইয়ে এসে এই অপমান হু হাহাহাহাহ । আমি নামতে চাইলে শালার ড্রাইভার নামতে দেয় নাই । সব আপারা বলতেছে ছবি নাম নাম । ছবি তুলে আন ধাক্কা লাগানে কা…….. আহারে বড়ই মিসিং করছি । এত্ত বড় বাস সব ছেলেরা নেমে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে । আহারে শান্তি মনে মনে আমাদের । শেষ পর্যন্ত অনেকদুর গিয়ে বাস স্টার্ট হয় । সব ভাইয়েরা ঘেমে ঘুমে এসে বাসে এসে বসল আর আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসি দিল। ঐতিহাসিক ছবিটা তুলতে পারলাম না বলে আমি কিছুটা মন খারাপ
১০। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল বুঝি
১১। এই যে রাতের শুরু……
১২। রাত বাড়ছে ধীরে ধীরে…
১৩। ভাল লাগছিল রাতের পরিবেশ……. বার বার দেশের কথা মনে পড়ছিল তখন । ভাবছিলাম এয়ারপোর্টে নেমে এক সিম কার্ড কিনবো আগে কিন্তু তাড়াহুড়ার জন্য কেহই একটা সিম কার্ড কিনেননি । দেশের সবাই হয়তো অস্থির হয়ে আছেন আমাদের পৌঁছার সংবাদের জন্য। কিন্তু করার কিছুই ছিল না তখন আমরা ডলারও ভাঙ্গাইনি যার ফলে রাস্তায় কিছু খেতে পারিনি প্রথম পর্যায়ে । খিদায় জান যায় যায় অবস্থা কিন্তু রুপি নাই তো তখন আমাদের কাছে ।
১৪। যেতে যেতে হঠাৎই দেখলাম গুহায় ঢুকে যাচ্ছি পরে শুনলাম এগুলোকে টানেল বলে পাথরের পাহাড় কেটে বানানো হয়ছিল । কিন্তু ভিতরে তেমন আলো নাই নিবু নিবু আলো আঁধারি ভেদ করে আমরা যাচ্ছি….. তখন এসির ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম । সুযোগ বুঝে কয়েকটা ক্লিক দিয়েছি তখন ।
১৫। টানেলের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি….. অনেক লম্বা ছিল টানেলগুলো
১৬। টানেলের ভিতর । এত দ্রুত বাস যাচ্ছিল ছবি উঠানো বেশ মুস্কিলই ছিল….
১৭। ভুতুড়ে পরিবেশ…….বিরাজ করছে যেন
১৮। যেতে যেতে এতটাই ক্লান্ত ছিলাম তখন অনেক । খিদা লেগেছিল প্রচন্ড……. কিন্তু ড্রাইভারকে কেউ কিছু বললে সে বুঝতেছে না কারণ সে মারাঠিয়া বোধয়……. তখন আমি বললাম ভাইছাব হাম লোগোকে বহুত জুড়োসে ভুখ লাগ গেয়ি। হাম লোগোকো খানাপিনা কি বহুত জরুরত হো । তখন ড্রাইভার বলল …..এহাপে রুখ নেহি সাখতি । এহাপে ট্রাফিক ফাকারলেঙ্গি । আগেসে জাকে ইক রেষ্টুরেন্ট হে উহা পর রুখলেঙ্গি তব আপ লোক খানাপিনা কর সাক্তি ।
তখন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল …. সারা রাস্তাই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল । বাস জার্নিটা এত কিছুর পরও খারাপ লাগেনি । খুব আনন্দময় পরিবেশ । বাইরে বৃষ্টি গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখতে কি যে ভাল লাগছিল । আার আমি তো এমনিতেই বৃষ্টি পাগাল প্রকৃতি পাগল……… আর কারো কেমন লাগছিল বুঝতে পারিনি ।
বাস তখন একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়াল ।
আল্লাহর রহমতে আমার এক শ্রদ্ধেয় বড় আপুর কাছে ইন্ডিয়ার রুপি ছিল ৭৫০/- তার দেবর তাকে যাওয়ার সময় দিয়ে দিয়েছিল । তখন সবাই বললাম ……. আগে খেয়ে নেই সবাই তারপর হিসাব নিকাশ পরে হবে । আপু রাজী হওয়াতে আমরা খেতে রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম । এক কলিগ স্যান্ডউইচের অর্ডার দিল । এই ফাঁকে তিনি আমাকে একটা আইসক্রিম খাওয়ালেন । উফ দারুন মুহুর্ত ছিল । পিপাসায় ক্লান্ত হয়ে আইসক্রিম খাওয়া….. অবশ্য আমি আইসক্রিম শেয়ার করেছি আপাদের সাথে । সকলে মিলে খাওয়া্র মজাই আলাদা ।
স্যান্ড উইচ রেডি হতে হতে প্রায় একঘন্টা লেগে গেল । কারণ আমরা ২২ জন ছিলাম । স্যান্ড উইচ খেতে দিলে দেখি এসব অখাদ্য আমার খাওয়ার উপযুক্ত না । একটা স্যান্ডউইচের টুকরায় এক কামড় দিয়ে খেয়ে আর খাইনি । ফালাছড়া করে যে যার মত খেয়ে বাসে উঠার জন্য বারান্দায় দাঁড়ালাম । আহা কি অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । নীল আলো, স্বপ্নময় পরিবেশ আহ কি শান্তি ।
১৯। সাথে সাথে একখান ক্লিক…….
২০। কি সুন্দর বৃষ্টি…… বাসের ভিতর বসে পড়ছি তখন…… আবার রওয়ান হব পুনের উদ্দেশ্যে
২১। চলছে আবার বাস….. যাচ্ছি আর যাচ্ছি
অবশেষে রাত প্রায় দুইটায় এনআইবিএম গিয়ে পৌঁছলাম….. অবশ্য সেখানকার সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল । খাবার নিয়ে……. নাম লিখে যে যার মত করে রুমের চাবি নিয়ে উঠলাম রুমে । রুম বন্ধ করে খেতে চলে গেলাম ।
আজ আর নয় আগামী পর্বগুলোতে আরো সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবি থাকবে এবং সাথে বর্ণনা ।
আর যদি আপনাদের কিছু জানার থাকে বা কোন বিষয়ে কৌতুহল থাকে আমাকে অকপটে জানাবেন । আমি তেমন গুছিয়ে লিখতে পারি না । সহজ সরল ভাষায় যতটুক পারছি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । ভাল লাগা মন্দ লাগা অবশ্যই জানাবেন । জেনে রাখা ভাল যে আমি আসলেই একজন বেখেয়ালি মানুষ । আমি সবার মত চারদিকে খেয়াল রাখতে পারি না । হয়তো অনেক কিছুই বাদ পড়ে গিয়েছে । তো আজকের মত বাই….. আগামী পর্ব দেখার আমন্ত্রণ রইল………
আগামী পর্বে থাকবে ছত্রি মন্দির, পাবর্তী পাহাড়, মার্কেট, আঁগারখাঁন প্যালেস…….. ইত্যাদি ইত্যাদি আরো আরো ছবি থাকবে সাথে বর্ণনা