Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সুমির কেউ নেই !!

: | : ১৮/০৯/২০১৩

মেয়েটির নাম খাদিজা খাতুন সুমি। জন্মস্থান রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার নতুন বাজার গ্রামে। পিতার নাম নুরু মিয়া। এই নুরু মিয়াও তার জন্মদাতা নয়, সৎ পিতা। নুরু মিয়া পেশায় একজন জেলে (মৎস্যজীবী) সুমির প্রকৃত বাবার নাম জানা যায় নি আদৌ, নেই মামলার নথিপত্রেও।

জন্মের আগেই সুমির মা সালেহার সঙ্গে তার জন্মদাতা পিতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেইজন্যে কখনো জন্মদাতাকে দেখেনি সুমি, বাবা বলে ডাকার সৌভাগ্যও হয়নি কখনো।
মা সালেহা দ্বিতীয় বিয়ে করলে সৎ বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয়নি হতভাগ্য সুমির। জীবন-জীবিকার তাগিদে পুলিশ দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। তখনও কি সুমি জানতো, যাদের আশ্রয়ে সে লালিত-পালিত হচ্ছে তাদেরই খুনের আসামি হিসাবে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাকে!

সুমির বয়স মাত্র ১১ বছর। যে বয়সে স্কুলে লেখাপড়া করার কথা, হেসে খেলে গ্রামের মাঠ কাঁপানোর কথা, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হইহল্লোর করে পাড়ার সবাইকে বিরক্ত করার কথা, সেই বয়সেই নেমে পড়েছে জীবন যুদ্ধে, হয়েছে হত্যা মামলার আসামি! রাষ্ট্রের বিবেকহীনদের হেলার কারণে খেটেছে ৫ দিনের রিমান্ড ! বিচারের মুখোমুখি হয়ে ঠাঁই হয়েছে সংশোধন কেন্দ্রে। গত ২৪ আগস্ট রাত থেকে গাজীপুরের কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রই সুমির ঠিকানা!

কী অপরাধ ছিল সুমির ? পেটের দ্বায়ে পরের বাড়িতে চাকরানীর কাজ করা? শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত যার মাথার উপর জোটে নি মা বাবার মমতার ছায়া, পেটে পড়ে নি ভরুপুর খাবার, পরনে জোটে নি নতুন কাপড়, পরের বাড়িতে চাকরানীর কাজ করবে নাতো সে কী করবে? ভাগ্য বিড়ম্বিত পরিবার বিতাড়িত ১১ বছর বয়সী একটি মেয়ের এ ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারতো? সুমির জায়গায় আপনি হলে, কী করতেন ? হত্যা করার পর সে খুনি ঐশির সাথে লাশ ধরাধরি করে বাথরুমে নিয়ে গেছে, রক্ত মুছেছে, ঐশির সাথে সিএনজি করে আফতাবনগর বস্তিতে গিয়েছে, এটা তার অপরাধ? আপনার বয়স যদি ১১ বছর হয়, আর আপনার সামনে ১৮/১৯ বছরের বয়সী খুনি যখন রক্ত রঞ্জিত চাকু হাতে বলবে, এটা কর, ওটা কর। তখন আপনি কী করবেন ? (প্রশ্নটা আমি হাসিনা, খালেদা থেকে শুরু করে সবার কাছেই রাখছি) প্রাণ বাঁচানোর ভয়ে হলেও তখন আপনি তার কথা মেনে নিবেন, নাকি নিবেন না? সুমিও তাই করেছে। একবার ভেবে দেখুন, তাতেই সে খুনি হয়ে গেছে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে সে রিমান্ডে গেল কেন? সংশোধন নামক কারাগারে আছে কেন ?

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরির্দশক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের জোড়া খুনের আসামি হিসেবে সুমির একমাস পূর্ণ হলো সোমবার। ঐশীর পক্ষে একাধিক আইনজীবী মামলা পরিচালনা করলেও পয়সা খরচ করার সামর্থ নেই বলে সুমির পক্ষে আদালতে দাড়ানোর কেউ ছিল না প্রথম দিকে ! তারপর সুমির জন্য আইনজীবী সৈয়দ নাজমুল হুদার মনে দয়ার সঞ্চয় হয়, এবং তিনি এগিয়ে আসেন সুমিকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে।

গাজীপুরের কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক তাসরিমের কাছ থেকে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সুমির কোনো আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন নি ! সুমির সৎ বাবা-মা হয়তো জানেনও না যে, সুমি জোড়া খুনের মামলার আসামি হিসেবে আটক আছে। সুমির দেওয়া ঠিকানায় গত ১২ সেপ্টেম্বর তার বাবা-মাকে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঠিকানা আদৌ ঠিক আছে কিনা কিংবা তারা চিঠি পাবেন কিনা তাও অনিশ্চিত!!

১১ বাছর বয়স লেখাপড়া করার জন্যে তেমন কোনো ভারী বয়স নয়। এখনো ইচ্ছে করলে সুমিকে স্কুলে পাঠানো যায়, গড়ে তোলা যায় মানুষের মতো মানুষ করে। তার জন্যে প্রয়োজন বৃত্তবাম বা সচেতেন কোনো ব্যক্তির পথরে হৃদয়ে দয়া বৃষ্টি ও সরকারের সহায়তা । আমাদের দেশে এমন কেউ কি নেই, যিনি অসহায় সুমির দায়িত্ব নিতে পারেন ! ২০১০ সালে তো পুরান ঢাকার নিমতলীর আগুনে স্বজন হারানো তিন মেয়ের বিয়ে দিয়ে অসাধারণ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এইদেশে সবকিছু সরকারকেই করতে হবে ? হাসিনাকেই করতে হবে? দেশ ও জনগণের প্রতি বাকীদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই ? আপনারা যারা মানবতার কথা বলে চেঁচাতে চেঁচাতে রোজ-ই গলা ফাঁটাচ্ছেন, লেখে লেখে পত্রিকার পাতা ভরে ফেলছেন, টেলিভিশনের চ্যানেল গরম করছেন, এনজিও, সমাজসেবা, জনসেবা, হেবা, কাবা নামে বিভিন্ন সংগঠন খুলে বসে আছেন, তারা কি সুমির কথা একবারো শোনেন নি ? একবারো কি পত্রিকার পাতায় সুমির কথা পড়েন নি? কোথায় আপনাদের মানবতা? কোথায় আপনার সমাজসেবা? আজ কেন মুখ গুটিয়ে পালিয়েছেন!!

আগামি ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য আছে। তবে আশার কথা বলুন আর ট্যানেলের শেষ প্রান্তে দুর্লভ আলোক শিখা বলুন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সোমবার সুমির পক্ষে ওকালতনামা দাখিল করেছে। ওকালতনামা দাখিলের পর সমিতির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার রিংকি জানিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেট অভিভাবকের জিম্মায় জামিন দিলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সুমিকে নিজেদের জিম্মায় গ্রহণ করে সমিতির নিজস্ব শেল্টার হোমে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জানি না, যে সুমির জন্যে, তার ভবিষ্যত জীবনের জন্য কতটা সহায়ক হবে।

(ক্যাটাগরিতে মানবতা বিভাগটি নেই, যোগ করলে ভালো হয়, আশা করছি প্রিয় সম্পাদক এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top