সমুদ্র সৈকতের রাত (তৃতীয় পর্ব)
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলছিলাম তখনও ।
–চলো ওই দিকটা ঘুরে আসি আমরা, মাধবী বলে উঠলো ।
দ্বিধাগ্রস্ত আমি কি করব ভাবছিলাম । এমনি সময় মাধবী খলখল করে হেসে আমার একটা হাত ধরে উচ্ছল হয়ে বলে উঠলো, চল না, রাতের সমুদ্র দেখতে খুব ভালো লাগবে দেখো…
মাধবীর হাসিতে একটু চমকে উঠে ভাববার চেষ্টা করলাম, মাধবী কি বরাবর এমনি করেই হাসে ? মনে করতে পারলাম না, এবার হঠাৎ মনে হল, আমায় ধরা মাধবীর হাত কি খুব ঠাণ্ডা ! ভূতদের হাত নাকি বরফের মত ঠাণ্ডা হয় ! তেমনটা নয়…মানে…আমি হেঁটে চলেছি, মাধবীর হাতে আমার হাত, আমার শরীর মাঝে মধ্যে বেশ শিউরে উঠছিল !
–ওই দেখো, মা, মা ! বলে ডেকে উঠলো মাধবী ।
মাসিমা আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন মনে হল । হ্যাঁ, তাই তো, মাসিমাই তো–তিনি আমায় চেনেন । আমায় দেখে আশ্চর্য হলেন না, সামান্য হেসে শুধু জিগ্যেস করলেন , কেমন আছো বাবা ?
আবার আমার মুখ থেকে কথা সরছিল না, বাস্তবতার বাইরের জগতের সঙ্গে মিলিয়ে নেবার চেষ্টায় নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম মাসিমার মুখের দিকে !
হওয়াতে ওঁর খোলা চুলগুলি এলোমেলো উড়ছিল–চোখের মনিতে চাঁদের তন্দ্রালোক পড়ে মাঝে মাঝে কেমন চকচক করে উঠছিল ! মনে হচ্ছিল সমুদ্র জলের ফসফরাসের মত ওঁর চোখ গুলিও কি জ্বলছে ! কিছুতেই আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না ।
আমার নীরবতা দেখে মাসিমা বলে উঠলেন–তোমার রাগ এখনও ভাঙ্গল না দেখছি…তপন, তোমার রাগ ভাঙাতেই তো মাধবীর সঙ্গে আমায় আসতে হল–
ফ্যাকাসে হাসার চেষ্টা করলাম, সামান্য হাসি ধরনের শব্দ বেরিয়ে এলো আমার মুখ থেকে । কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, মাসিমা বা মাধবীর কথাগুলি অন্য রকম লাগছিল কেন ! এত উদাসী–যেন হওয়ায় দূর থেকে ভেসে আসা শব্দের মত আমার কানে এসে ঢুকছে !
–রাত অনেক হল–চল আমরা হোটেলে যাই, মাধবী বলে উঠলো।
আমার সম্বিত ফিরল, রাত অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল, সে দিকে তো খেয়ালই ছিল না–
–তুমি কথা বলছ না কেন ? দেখো বাবা, আমার মেয়ে অল্পেতেই রেগে যায়–আবার রাগ ভাঙতে বেশী সময়ও লাগে না–
আমি অন্য কথা ভাবছিলাম, মাসিমার কথা সব আমার কানে ঢুকছিল না–নিজের হোটেলে ফিরে যাবার কথা ভাবছিলাম ।
–চল না, আমাদের হোটেলে–একটু সময় বসে যাবে, আবার বলে উঠলো মাধবী–জানো আমরা তোমাদের হোটেলে গিয়ে ছিলাম । তোমাকে না পেয়ে ফিরে আসার সময় তোমাকে দেখেছি । আবছা আলো অন্ধকারের মধ্যেও তোমায় চিনতে কোন অসুবিধাই হয়নি আমার ।
ক্রমশ…