Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

স্পর্শ

: | : ২১/০৯/২০১৩

গাড়ি থেকে নামতে নামতে দেখলাম রুনা কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে আমি গাড়ির যে গেট দিয়ে নামছি সেই গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখেই সে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিল।

আমার মতো সেও যে আমাকে পছন্দ করে তা সে এখনও বলেনি। কিন্তু আমার মন বলছে সে আমাকে পছন্দ করে। তাই মনে হচ্ছে তার সাথে আমার কথা বলা দরকার। কিন্তু ভয়ও লাগছে যে আমি কথা বলতে গেলে সে যদি আমাকে অপমান করে?

কিসের উপর ভিত্তি করে আমি তার সাথে কথা বলতে যাবো? সে যদি আমাকে পরিষ্কার করে কিছু বলতো তবে আমার জন্য সুবিধা হতো। কিন্তু শুনেছি মেয়েরা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কি করি এখন?

তার সাথে আমার পূর্বে কি কি হয়েছে তা স্মরণ করার চেষ্টা করলাম। সে আমার কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো প্রথম গিফট ফেরত দিলেও প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সহ রেজিস্ট্রিকৃত ডাকে পাঠানো আমার বাবার লেখা প্রথম বই কিন্তু পিয়নের কাছ থেকে রিসিভ করেছে। প্রাপ্তি স্বীকার পত্রে তার ইসরাত জাহান রুনা নাম এর স্বাক্ষরও আছে।

আর আমি অফিসের কাজ এবং কালো বোরখা পরিহিত মাথায় সাদা ওড়না দেওয়া রুনা তার ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে কুয়েটের গাড়ি করে কিছু সময় আগে খুলনা শহরে এসে গাড়ি থেকে নামার পূর্বে আমার সামনে দাঁড়িয়ে যখন রুনা তার দু হাত দিয়ে ওড়না উপরে উঠিয়ে ভালো করে তা আবার মাথার উপর দিচ্ছিল তখন তার মুখাবয়বে খেলা করছিল এক চিলতে হাসি ও স্পষ্ট আমন্ত্রণ।

একটা স্মরণীয় উক্তিতে এরকম একটা কথা পড়েছিলাম যে কোন বিষয়ে সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণের ভুলের কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে সারাটাজীবন ধরে তার জন্য একজন মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে হয়। কাজেই আমি সেই ভুলটি করতে চাই না।

দুরু দুরু বুকে চোখ খোলা রেখেও যেন চোখ বন্ধ করে তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন?
সে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে হেসে বললো, ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?

রুনার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার না পেয়ে ভালো ব্যবহার পেয়ে আমার সব ভয় কেটে গেল। প্রশান্তিতে ভরে গেল আমার ভিতরটা। নিজেকে খুব হাল্কা মনে হলো। আর বিকেলের এই কোমল পরিবেশে এতো কাছ থেকে তার হাসিমাখা মুখ এবং সামান্য মোটা সুন্দর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আমার সারা শরীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। উত্তেজিত কন্ঠে বললাম, খুব ভালো আছি।
আমি আবার বললাম, চলুন না নিউ মার্কেটের ওখানে যাই!
সে বলল, ঠিক আছে চলুন।

আমরা রিক্সায় চড়লাম। সে ডানপাশে আর আমি বামপাশে। তার শরীরের স্পর্শে আমি শিহরে উঠলাম। অবাক হয়ে ভাবলাম, একদিন আমার ভাবীর বোন আমাদের বাড়ি এলে তার সাথে মার্কেটে গিয়েছিলাম রিক্সায়। তার পাশে বসে তো আমার এরকম অনুভুতি হয়নি! ভাবলাম রুনাই আমার স্ত্রী হওয়ার উপযুক্ত। কারণ সে আমার স্ত্রী হলে সারাজীবন তার স্পর্শে আমার শরীর এরকম শিহরে উঠবে। যার স্পর্শে আমার শরীরের এই শিহরণ তাকেই আমার বিয়ে করা উচিৎ।

সে বলল, আপনার প্রথম গিফট রিসিভ না করে ফেরত দিয়েছিলাম বলে কষ্ট পেয়েছেন জানি। আসলে তখন তো আপনার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। এমনকি তখন আপনার সাথে দেখাও হয়নি।
আমি কিছু বললাম না।
সে বলল, ঠিক আছে। তখন নেইনি, এখন নিব। এবার হলো তো।
আমি খুশি হয়ে বললাম, হ্যাঁ।
সে বলল, আপনার বাবার বই তো অনেক মানসম্পন্ন। পিয়নের কাছ থেকে বই গ্রহণ করার পর আমি কয়েকবার পড়েছি। তিনটা বই আমাকে দিয়েছেন, আরো বিশটা বই আমাকে দিবেন। আমার কাছের মানুষদেরকে দিব।

বাবার বই তার কাছে ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম। আমার জীবনের সাথে যেহেতু বাবার বই প্রকাশের কাজটা যোগ করে ফেলেছি সেহেতু রুনা এই কাজের মূল্য দিলে সে হবে আমার খুব ভাল স্ত্রী।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ সে খিল খিল করে হেসে ফেলে বলল, আপনার পাগলামিটা আমার কিন্তু খুব ভাল লেগেছে।
আমি বললাম, কোন পাগলামি?
সে বলল, আমাদের বাড়ির সামনে আপনার বাবার বইয়ের পোস্টার লাগিয়ে আমার মন জয় করতে চেষ্টা করার ব্যাপারটা।
এই বলে সে আবারও হেসে ফেলল। আমার শরীরে একটু ঠেলাও মারলো সে। তার কথায় আমি লজ্জা পেলাম। কিন্তু ঠেলা দেওয়াটা উপভোগ করলাম।
নিউ মার্কেটের সামনে পৌঁছে যাওয়ায় আমরা রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম।
তারপর চটপটি খেলাম।

সে বলল, আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যে ভার্সিটিতে আমি পড়াশোনা করছি সেখানেই আমি জীবন কাটাবো এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে।
আমি বললাম, আজকের পর থেকে আপনার সাথে সবসময় আমার কথা বলতে ইচ্ছা করবে। তাই এই সম্মতিটা প্লিজ দিন যে আমি ফোন করলে আমার সাথে আপনি কথা বলবেন।
সে একটু হাসলো। তারপর লাজুক চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে, বলবো।

এরপর আমরা আইসক্রিম খেলাম। তারপর রিক্সায় উঠলাম। রাতের বেলা রুনার সাথে রিক্সায় যাচ্ছি, মনে হচ্ছে যেন কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছি।
রুনা বলল, আমাদের বাড়িতে আপনাকে আজই নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই নিলাম না।

তাদের বাড়ির সামনে যেতেই দেখলাম আমার লাগানো পোস্টারগুলো নষ্ট হয়নি। সে সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে একটু হাসলো। আমিও না হেসে পারলাম না।
দুজনই রিক্সা থেকে নামলাম। সে আমার একেবারে সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো। এত কাছে যে তার নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পেলাম যেন। সে আমার বাম হাতের কব্জির ওখানে ধরে বলল, আসি, ভাল থাকবেন।
আমি বললাম, আপনিও ভাল থাকবেন।

সে গেটের কাছে গিয়ে ফিরে তাকালো আমার দিকে। মুখে হাসি ফুটে আছে। ওর প্রতি মনের মধ্যে খুব টান অনুভব করলাম। ওকে যেতে দিতে ইচ্ছা হলো না। মনে হলো আমি আর একা নই। আমার জীবনের সাথে রুনাও আছে। নিজেকে খুব ক্ষমতাশালী মনে হলো। এতো ক্ষমতাশালী যে সবকিছু যেন জয় করে ফেলতে পারি।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top