সমুদ্র সৈকতের রাত–(শেষ পর্ব)
ওদের কোন কথা আমি কেন যেন ফেলতে পারছিলাম না–ওদের দু জনের সঙ্গে সমুদ্র পার ধরে ওপরের রাস্তার দিকে হাঁটতে লাগলাম। সামান্য গিয়েই বড় রাস্তা পড়ল, আর রাস্তা পার করতেই মাধবীদের হোটেল দেখা গেল। চাঁদের আলো আগে থেকে অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হোটেলের গেট খোলা–ভেতরে ঢুকতে যাব এমনি সময় মনে হল–হঠাৎ মানুষের আকৃতির কালো একটা ছায়া পাশ থেকে সরে গেল ! চমকে উঠে ছিলাম মুহূর্তের জন্যে, থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাধবী আমায় লক্ষ্য করছিল, ও বলে উঠলো,ও হোটেলের ওয়াচম্যান, এমনি সময় ছায়াধারী লোকটা আমার একদম সামনে এসে দাঁড়িয়ে স্যালুট করল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
ক্রমশ: মন দুর্বল হয়ে উঠছিল। ভৌতিক কাহিনীর অদ্ভুত চরিত্রগুলি যেন আমার চোখের সামনে প্রকট হতে লাগলো। হোটেলের রিসেপসান কাউন্টার ছাড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে যেতে হবে–রিসেপসানের সামনের টেবিলে বড় একটা মোমবাতি জ্বলছিল।তার অস্পষ্ট আলোর শিখা কেঁপে কেঁপে উঠছিল–কাউন্টারে বসে থাকা আলোছায়া ঘিরে থাকা লোকটার কালো ছায়া তার পেছনের দেওয়ালে যেন বারবার নেচ নেচে যাচ্ছিল । আমি যেন এক অলৌকিক পৃথিবীর বাসিন্দা ! শরীরের অনুভূতি অনেক কমে গিয়েছিল ।
–আমরা বেশ কটা হোটেল ঘুরে শেষে এ হোটেলে রুম পেলাম,এই পিক সময়ে পুরীতে বড্ড ভিড় হয়, বহু দূর থেকে যেন মাসিমার গলা ভেসে এলো।
ভয় ধীরে ধীরে আমায় গ্রাস করে নিচ্ছিল–এমনি সময় মনে হল ঠাণ্ডা একটা হাত আমার হাতে এসে ঠেকল । আমি আঁতকে উঠলাম–গলা দিয়ে সামান্য ভয় সূচক আওয়াজ বেরিয়ে এসে ছিল হবে।
–কি হল তোমার ? মাধবীর গলা শুনতে পেলাম ।
আমি নিজের অজান্তেই চীৎকার দিয়ে উঠে ছিলাম। মাথা ঘুরে গিয়েছিল,দু চোখের সামনে গাঢ় অন্ধকার দেখলাম। আর ঠিক এমনি সময় হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো–জোরালো আলোয় চারিদিক ঝলমল করে উঠলো–আলোর বন্যায় আমার ঘোর ঘোর ভাবটা কেটে যেতে থাকলো। চার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হ্যাঁ, সব ঠিক, ওই তো মাসিমা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমার একটা হাত আঁকড়ে ধরে আমার দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে বিস্মিত চেয়ে আছে মাধবী । হোটেলের ওয়াচম্যান, রিসেপসনিস্ট, সবাই আমার চীৎকারে আমার পাশে এসে জড় হয়েছে ।
উদ্বিগ্ন মাধবী বলে উঠলো, কি হয়েছে তোমার ? কেমন লাগছে এখন ?
এক বেয়ারা এক গ্লাস জল নিয়ে ছুটে এসে আমার মুখের সামনে তুলে ধরল । আমি চারিদিকে তাকিয়ে পরখ করে নিলাম, এখন নিশ্চিন্ত হলাম–বুঝতে পারলাম, আমার চারিদিকের পরিবেশে কোন অলৌকিকতার ছাপ নেই ।
সমাপ্ত