উপন্যাস “প্রচ্ছায়া” (২য় পর্ব)
গতকালের পর,
পুলিশ ধারনা করছে চেহেরা দেখে যাতে কেউ লাশ সনাক্ত না করতে পারে সেই জন্যে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে মুখশ্রী নষ্ট করে ফেলা হয়েছে । ঢাকা শহরে লেকের পাড়ে হঠাত্ তরুনীর মুখশ্রী বিগড়ে যাওয়া লাশ ! খবরটি জোরে সুরেই মিডিয়াতে এসেছে । পুলিশ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়েছে বলে তদন্তের গতি ধীর ।
পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পেয়েছে, নিহত মেয়েটির নাম রাজিয়া খাতুন । রাজিয়া আগে গার্মেন্টসে কাজ করত । পরে সে ধীরে ধীরে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে । বর্তমানে সে একটি আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা করত । পুলিশের ধারনা যৌন কেলেংকারীর জন্য হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হতে পারে । পুলিশ উক্ত হোটেলের ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করেছে । ম্যানেজারকে রিমান্ডে নিয়েও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় নি । কয়েক দিনের মধ্যেই ম্যানেজার সাহেব জামিনে মুক্ত হয়ে গেছেন । আমাদের দেশে অনেক নামীদামি লোক অপমৃত্ত্যুর শিকার হচ্ছেন । তাদের মৃত্ত্যুর রহস্যই যখন পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে । পুলিশ যেখানে এসব হাই প্রোফাইলদের মৃত্ত্যু রহস্যই উন্মোচণ করতে পারছে না, সেখানে এক পতিতার মৃত্ত্যু নিয়ে মাথা গামানোর মত সময় ও রুচিবোধ পুলিশের কোথায় ? দুইদিন মিডিয়াতে হেডলাইন হল । মানব অধিকার সস্থাগুলো কয়েকদিন চেচাঁমেচি করল । বিরোধীদল ইস্যু বানানোর জন্য বলেছে, যে সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই ।
মনে হচ্ছে যেন রাজিয়া খুন হয়ে বিরোধীদলের জন্য লাভ-ই হয়েছে । ভাবখানা এমন যেন তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন দেশে কোনো খুন খারাপি হয় নি । আমাদের দেশে সব সরকারের চরিত্র যেমন এক, ঠিক তেমনি সবগুলো বিরোধীদলের চরিত্রেও রয়েছে অভিন্নতা । সরকারে থাকলেই এক রকম, আর বিরোধীদলে গেলেই অন্য রকম । আমাদের দেশ গরীব । আমাদের দেশে খাদ্যের অভাব, জ্বালানী তেলের অভাব, বিদ্যুতের অভাব, গ্যাসের অভাব, চাকরীর অভাব, অথচ এতসব অভাবের মধ্যে ইস্যুর কোনো অভাব নেই । দুইদিন পর আবার নতুন ইস্যু সৃষ্টি হল এবং ধীরে ধীরে সবাই রাজিয়াকে ভুলে গেল !