রবীন্দ্রনাথ ও সাহিত্যে নোবেল: কিছু তথ্য
নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয় ১৯০১ সাল থেকে। সাহিত্য,শান্তি,পদার্থবিদ্যা,রসায়ন ও চিকিৎসা বিদ্যা এ ৫টি বিষয়ে দেয়া হতো। ১৯৬৬ সাল থেকে অর্থনীতিতেও নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় আমাদের আগ্রহ বরাবরই সাহিত্য নিয়ে। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর আমাদের পত্রিকার পাতায় তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
১৯০১ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১১০ জন। এর মধ্যে ১৯১৪, ১৯১৮, ১৯৩৫, ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ৭ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি। চার বার দেয়া হয় যৌথভাবে।
১৯০১ সালে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ফ্রান্সের কবি রেনে ফ্রাঁসোয়া আর্মাদ প্রুদহোম। তিনি সালি প্রুদহোম নামে পরিচিত। কবিতায় অবদানের জন্য তিনি এ পুরস্কার জেতেন।
১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ ১৯০১ থেকে ১৯১২ পর্যন্ত নোবেল সাহিত্য পুরস্কার যাঁরা জিতেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন ইউরোপ মহাদেশের সাহিত্যিক। ইউরোপের বাইরে মানববসতিপূর্ণ ৫টি মহাদেশের (এশিয়া,উত্তর আমেরিকা,দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা) সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রথম বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ।
১৯৩০ সালে সিনক্লেয়ার লুইস প্রথম মার্কিন সাহিত্যিক (উপন্যাসে) হিসাবে নোবেল পুরস্কার পান। (উত্তর আমেরিকা মহাদেশ)
১৯৪৫ সালে চিলির গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে প্রথম পুরস্কারটি জেতেন।
১৯৭৩ সালে প্যাট্রিক ভিক্টর মার্টিনেস হোয়াইট প্রথম অস্ট্রেলীয় নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক হবার গৌরব অর্জন করেন।
১৯৮৬ সালে নাইজেরিয়ার ড. ওলে সোয়িঙ্কা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পান।
১৯০৪ সালে প্রথম যৌথভাবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পান ফরাসী কবি ফ্রেডরিক মিস্ত্রাল ও স্পেনীশ নাট্যকার হোসে একিগারে। এরপর ১৯১৭, ১৯৬৬ ও ১৯৭৪ সালে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
১৯০৯ সালে সুইডেনের সালমা ল্যাগারলফ প্রথম মহিলা হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৮ সালে মিশরের নাগিব মাহফুজ প্রথম মুসলিম ও আরব হিসাবে এ পুরস্কার পান।
১৯৫৮ সালে বোরিস পাস্তারনাক তাঁর ড. জিভাগো উপন্যাসের জন্য প্রথম রুশ হিসাবে এ পুরস্কার পান। রাশিয়া নোবেল কমিটির কাছে বরাবরই ব্রাত্য বিবেচিত হয়ে আসছে। রাশিয়াও নোবেল পুরস্কারকে পাত্তা দেয়নি। পাস্তারনাককে সরকার সে পুরস্কার প্রহণের অনুমতি দেয়নি।
১৯১৮ সালে সুইডিশ লেখক এরিক আক্সেল কার্নফেল্ড নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। এটাই প্রথম প্রত্যাখ্যানের নজির। ১৯১৮ সালে পুরস্কারটি দেয়াই হয়নি আর।
১৯৩১ সালে সেই এরিক কার্নফেল্ডকেই প্রথম এবং এ পর্যন্ত একমাত্র মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। এর কারণ আজো অজ্ঞাত।
রহস্যময় বঞ্চনা
নোবেল কমিটি অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে; তেমনি অনেক অখ্যাত (অনেকের মতে অযোগ্য) সাহিত্যিককে পুরস্কৃত করে সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু নোবেল কমিটি আজ পর্যন্ত বিপুল সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে অনেক কিংবদন্তীকে পুরস্কারটি থেকে বঞ্চিত করে। যদিও সবার হৃদয়ে বঞ্চিতদের জন্য অপরিমেয় শ্রদ্ধা আছে। সেসব বঞ্চিত কিংবদন্তীরা হলেন–
লিও টলস্টয়, এমিল জোলা, হেনরিক ইবসেন, প্রুস্ত, জেমস জয়েস, রবার্ট ফ্রস্ট, ডাবলু.এইচ.অডেন, এজরা পাউন্ড, সিমন দ্য বুভেয়র, বার্টল্ড ব্রেখট, ফ্রেদরিকো গারসিয়া লোরকা, ফ্রানজ কাফকা, ভ্লাদিমির নভোকভ, জর্জ লুই বোরহেস, মার্ক টোয়েন, জোসেফ কনরাড, মাক্সিম গোর্কি, আন্তন চেখভ, আলেক্স হেলি, ল্যু সুন, স্ট্রিন্ডবার্গ, চিনুয়া আচেবে, গ্রাহাম গ্রীন প্রমুখ।
এঁরা মৃত্যুর কারণে সব পুরস্কারের উর্ধ্বে চলে গেছেন।
কিন্তু এখনো বেঁচে আছেন এমন কিছু কিংবদন্তী সাহিত্যিক যাঁরা নোবেল কমিটির বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এরকম কয়েকটি সোনালি নাম-
মিলান কুন্ডেরা, হারুকি মুরাকামি, এদোনিস ওরফে আলী আহমদ সাঈদ, নোগুগি উয়া থিয়াঙ্গো, ইসমাইল ফারাহ, উমবার্ত একো,বেন ওকোরি, কার্লোস ফুয়েন্তেস,ইসমাইল কাদার, ইয়েভগেনি ইয়েভতুশেঙ্কো।
তারপরও নোবেল পুরস্কারই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্থিব পুরস্কার।
(সর্বশেষ আপডেট-১১/১০/১৩)