ভালোবাসার নিদর্শন মাথিনের কূপ
ভালোবাসার প্রিয় মানুষটির জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে অনিদ্রা আর অনাহারে নিজের জীবনকে চিরদিনের জন্য বিসর্জন দিয়েছে এক রাখাইন জমিদার কন্যা। নাম তার মাথিন। প্রেমের বহুল আলোচিত সেই ঘটনার কালজয়ী সাক্ষী আজকের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। যা রয়েছে সীমান্ত উপজেলার টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সীমান্ত এলাকা টেকনাফ থানায় বদল হয়ে আসেন ধীরাজ ভট্টাচার্য নামের এক সুদর্শন পুলিশ অফিসার। তিনি চাকরি করতে আসেন সুদূর কলকাতা থেকে। ধীরাজ খুবই একাকী সময় কাটাতেন। ধীরাজ তার কর্মের ফাঁকে প্রায় সময় থানার বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে থাকতেন। টেকনাফ থাকা কম্পাউন্ডে ছিল বিশাল একটি পানির কূপ। রংবেরঙের পোশাক পড়ে পাতকুয়া থেকে কলসী হাতে পানি নিতে আসত আশপাশের রাখাইন যুবতীরা। এখানে রাখাইন এক যুবতীর মৃদু কণ্ঠে ভেসে আসা সুরলা গান শুনে মুগ্ধ হয় প্রেমিক দারোগা ধীরাজ। লোকজনের কাছ থেকে জানা যায় পুরো টেকনাফ জুড়ে এটি ছিল একমাত্র পাতকুয়া। তাই সেখানে ১৪-১৫ বছর বয়সী রাখাইন কন্যারা আড্ডা দিত সবসময়। একদিন আসা-যাওয়ার পথে স্থানীয় জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র রূপবতী কন্যা মাথিনকে দেখে ভালোবেসে ফেলে ধীরাজ। এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে থানার বারান্দায় মাথিনের আসা-যাওয়া দেখত। এভাবে একপর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। মন দেয়া নেয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই কলকাতা থেকে দারোগা ধীরাজের পিতার জরুরি টেলিগ্রাম আসে। খুব জরুরি বাবার টেলিগ্রাম পেয়ে ধীরাজ চলে গেলেন। কিন্তু যাওয়ার আগে মাথিনকে ফিরে এসে বিয়ে করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে যান। কিন্তু ধীরাজ আর ফিরে আসেনি। এদিকে ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষা প্রহর গুনতে গুনতে অনাহার ও অনিদ্রায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জমিদার কন্যা মাথিন। সে থেকেই পাতকুয়াটির নামকরণ করা হয় ‘মাথিনের কূপ’। ১৯৩০ সালে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে লেখা ‘যখন পুলিশ ছিলাম গ্রন্থে’ তারই ভালোবাসার স্মৃতি মাথিনের কথা লিখেছেন। যে বইটি লাহোরের ওবাইদুল্লাহ রোডের জিলানী ইউনিক প্রেস থেকে ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের বিখ্যাত চরিত্রে মাথিনের কূপ সংশ্লিষ্ট কাহিনীটি রচিত হয়েছে। এখন বছরজুড়েই দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক টেকনাফের মাথিনের কূপ দেখতে আসেন।