Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “প্রচ্ছায়া”

: | : ২৭/০৯/২০১৩

ম্যাডাম হয়ত মিজানের মায়াবী চেহারা দেখে বা অন্য কোনো কারণে অভিভূত হলেন । খানিকক্ষণ মিজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, এসো ।
বড় ঘরটিতে দুইটি রুম । একটি কক্ষ বেশ বড়, সেইটিতে এখন ক্লাস হচ্ছে । অন্য রুমটি বড়টির তুলনায় আয়তনে অনেক ছোট, এখানটিতে ছাত্রদের জন্য সবার ব্যবস্থা । মিজানকে সেই রুমে বসতে বলে ম্যাডাম ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়ালেন । বসার রুমটি বেশ গুছানো । মিজান আলতু করে চোখ ঘুরিয়েই মুগ্ধ হল । মিজান বসে বসে ভাবছে পাশের ঘরটিতে কে থাকে ? নিশ্চয় কেউ থাকে না । ঐ ঘরটি হয়ত ম্যাডামের রেস্টের জন্য ।
ছয়টার দিকে স্কুল ছুটি হল । মিজান জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পারছে একে একে সকল ছাত্র বেরিয়ে যাচ্ছে । আর ম্যাডাম পশ্চিমের ঘরের দিকে যাচ্ছেন । ম্যাডামকে অন্য ঘরে ঢুকতে দেখে মিজানের মনে শঙ্কনর সঞ্চার হল, ম্যাডাম কি তার কথা ভুলে গেল ? স্কুল ছুটি হবার পর এইদিকে না এসে অন্য ঘরে ঢুকলেন কেন ? এখন কী করা যায় ? মনে মনে এই ভেবে মিজান স্থুল অস্বস্তি বোধ করছে । তার কি উচিত হ্যাক ছেড়ে ম্যাডামকে নিজের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ? মিজান আসন ছেড়ে দাড়াতে দাড়াতেই ম্যাডাম পশ্চিমের ঘরে ঢুকে পড়লেন ।
প্রায় কুড়ি মিনিট পর ট্রে হাতে ম্যাডাম ফিরে এলেন । পৃথিবীকে অধারে তলিয়ে দিতে বাহিরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে এতক্ষণে। ম্যাডাম হয়ত গোসল করেছেন । তার মাথার কেশ ভিজা এবং পরনের কাপড় পরিবর্তিত । একটু আগে তার পরনে ছিল সেলোয়ার কামিজ, আর এখন পরে এসেছেন হালকা টিয়া রঙের শাড়ী । ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে কাপ ভর্তি করার পর একটি কাপ মিজানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ম্যাডাম বললেন, নাও,চা খাও ।
মিজান চায়ের কাপে চুমুক দিলো । এমনিতে তার চা-এ রুচি কম। তবে আজকের চা কেন যেন খুব ভালো লাগছে । ম্যাডাম নিজেও চা-এ চুমুক দিলেন । চা খাওয়ার এক ফাঁকে ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, বাহিরের গাড়ীটি কি তোমার?
মিজান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানানোর পর ম্যাডাম ফের চায়ের কাপে চুমুক দিলেন । কিছুক্ষণ পর ফের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের বাসা কোথায়?
গুলশান । হৃষ্ট ঠোঁটে বলল মিজান ।
আগে কোথাও নাচ শিখেছ ?
জ্বী না ।
তুমি কি সিনেমা টিনেমায় অভিনয় করবে ?
না।
হঠাত করে নাচের প্রতি আগ্রহ কেন ?
জানি না। তবে মন খুব চাচ্ছে।
নাচের ব্যাপারে তোমার বাড়ির লোকজন জানে?
না ।
কেন ?
বাড়িতে কেউ নেই।
মানে?
মা মারা গেছেন তিন বছর আগে । আর বাবা দেশের বাহিরে ।
ম্যাডাম ভালো ভাবে মিজানের মুখের দিকে তাকালেন । মায়ের মৃত্ত্যুর কথাটি বলার সময় মিজানের ভেতর কোনো রকম পরিবর্তন পরিলক্ষিত হল না । মনে মনে ভাবলেন, এই ছেলের অঙ্গসৌষ্ঠব মায়াকারা হলেও অন্তরে আবেগ কম । আর আবেগহীন মানুষকে দিয়ে আর যাই হোক, শিল্পচর্চা সম্ভব নয় , কারণ আবেগের আরেক নাম সৃষ্টি, আর সৃষ্টি মানেই শিল্প । ম্যাডাম একবার ভাবলেন ছেলেটাকে না করে দিবেন, কিন্তু মিজানের মুখের দিকে তাকাতেই তার হৃদয় সদয় হল । মিজানকে সোফায় আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকতে দেখে কেন যেন তার মনে হল, এই ছেলে অনেক আশা নিয়ে এখানে এসেছে । ওকে যদি সরাসরি না করে দেই তাহলে কষ্ট পাবে। তাই তো খানিক পর ভাবলেশহীন কন্ঠে বললেন, এই বয়সে নাচ শিখতে পারবে?
মিজান সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো, আমার আগ্রহ অনেক, চেষ্টাতেও কোনো রকম ত্রুটি পাবেন না। তাছাড়া তাল লয় সম্বন্ধে মোটামোটি ধারনাও আছে ।
ম্যাডাম বললেন, তাই নাকি?
জ্বী। আমি বেহেলা বাজাতে পারি।
আচ্ছা, বেহেলা তোমার সাথে আছে?
জ্বী, গাড়ীতে ।
আমাকে বাজিয়ে শোনাবে ?
মিজান গাড়ী থেকে বেহেলা নিয়ে আসল । ম্যাডাম আড়ষ্ট হয়ে বসে আছেন । মিজান বেহেলা বাজাতে শুরু করেছে। বেহেলা বাজানো আবস্থাতেই মিজান লক্ষ্য করল, তিনদিন আগেও সে ভালো বেহেলা বাজাতে পারত । আজ হঠাত হঠাত তাল কেটে যাচ্ছে ! কেন এমন হচ্ছে মিজান ভেবে পেল না। তবে কি সে বেহেলা বাজানো ভুলতে বসেছে ? মনোজগতে ঢের সময় বিচরণ করার পর একটি উত্তরই খোঁজে পেল, একেতে অর্ধ শিক্ষা গ্রহণ করেছে, তার উপরে চর্চা বন্ধ একেবারেই । কথায় আছে না, অর্ধ শিক্ষা কেলেংকারী । হ্যা কেলেংকারীই হল বটে। যাও বা এখানে স্থুল সম্ভবনা দেখা দিয়ে ছিল, তালভাঙ্গা বেহেলার সুর শোনে বিরক্ত হয়ে ম্যাডাম নিশ্চিত মানা করে দিবেন । এমন শঙ্কায় জর্জরিত হয়ে মিজান বেহেলা নামিয়ে রাখল। মিউজিক পর্ব সমাপ্তি হতেই ফের আলোচনা পর্ব শুরু হল ।
ম্যাডাম বললেন, তোমার নাম কী যেন বললে?
মিজান।
শোনো মিজান, আমার এখানে যে সব ছাত্রছাত্রী আছে, এরা সবাই তোমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হবে । তোমাকে নিয়ে ওরা হয়ত হাসি ঠাট্টা করতে পারে। তোমাকে কথা দিতে হবে, তা নিয়ে তুমি কখনো মন খারাপ করবে না।
মিজান হ্যাসূচক ঘাড় নাড়ল । ম্যাডাম আগামীকাল থেকেই শুরু করতে বললেন । খানিক চুপ থেকে মিজান বলল, আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি সকাল বিকাল দু-বেলা নাচ শেখান ?
ম্যাডাম বললেন, না। আমার এখানে শুধু বিকালে ক্লাস হয় ।
সকালে কি আপনি অন্য কোনো কাজ করেন?
না, উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু না।
আমি যদি সকাল বিকাল দুই টাইম নাচ শিখতে চাই, আপনার কোনো আপত্তি আছে?
খানিক ভেবে ম্যাডাম বললেন, না, সকালে নয়। সকালে রেহার্স, বাগানের পরিচর্যা ব্যতীত আমার ব্যক্তিগত আরো কিছু ব্যস্ততা আছে। সাকলে তুমি এলে আমার ঐসব কাজ ব্যহত হবে। তুমি বরং এক কাজ করো, বিকালেই এক ঘন্টা আগে আসো। প্রতিদিন এক ঘন্টা বেশি শিখলেই অনেক।

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top