Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “নিয়োগ পত্র” সপ্তম পর্ব

: | : ৩০/০৯/২০১৩

সপ্তম পর্ব
(আট)
তিমির চৈতীকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায়। অথচ তার কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। সিরাজ মিয়া যা পেরেছে তিমিরের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এখানেই মানুষের সীমাবদ্ধতা। একজন যা পারে অন্যজন তা পারে না। হয়তো চৈতীও এমনটি চাইবে না।
চৈতীর সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম। তিন ভাইবোনের মধ্যে চৈতী একমাত্র মেয়ে। সবার ছোট। সুন্দরী। দেহের সোন্দর্য্য যতখানি না আকৃষ্ট করে মনের সোন্দর্য্য তার চেয়ে বেশী।  বাবা উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মচারী। তা নিয়ে কারও কোন গর্ব নেয়। চৈতী বলে-
–    বাবা কি করেছে বা করছে সেটা বড় কথা নয়, আমি কতটুকু করতে পারব সেটা বড় কথা।
–    তুমি যা করছ তা কিন্তু বাবা কখনও পছন্দ করবে না। তিমির দুষ্টু হেসে বলে।
–    পৃথিবীতে এই একটা জিনিষের স্বীকৃতি সহজে কেউ দেয় না। আদায় করে নিতে হয়।
–    কোন জিনিষটা।
–    এই যেমন আমি তোমাকে ভালোবাসি। কথাটা বললেই লঙ্কাকান্ড।
–    শুধু লঙ্কাকান্ড কেন। পারলে অযোধ্যাকান্ডও ঘটিয়ে দেবে। এই যেমন আমরা পার্কের বেঞ্চে বসে একটা বিকেল কাটিয়ে দিলাম সেটাও কি বলতে পারবে।
–    একদম না।
–    বাসায় ফিরে যদি জিজ্ঞাসা করে, কোথায় গিয়েছিলে।
–    মিথ্যা বলব।
–    বিবেকে বাঁধবে না।
–    আরে রাখো তোমার বিবেক। বিবেক বিবেক করতে করতে আসল সত্যটায় মুখ ফুটে বলা হয় না। একটা সত্যকে চাপা দিতে গেলে হাজারটা মিথ্যা বেরিয়ে আসে। তবুও শেষ রক্ষা হয় না বুঝলে।
তিমির একটা নিঃশ্বাসের শব্দ তুলে। একটু থেমে বলে-
–    চৈতী এই চিরন্তন সত্যটাকে সবাই কি আমাদের মত গোপন করে রাখে।
–    হয়তো তাই।
–    কিন্তু তাতে কি লাভ।
–    লাভ হয়তো নেয়, নিজেকে নিরপরাধ হিসেবে জাহির করার একটা কৌশল মাত্র।
–    প্রেমকে তুমি অপরাধ বলছ কেন। তিমিরের প্রশ্ন।
–    আপাতঃ দৃষ্টিতে অপরাধই মনে হচ্ছে। যেহেতু কোন সামাজিক স্বীকৃতি নেয়।
–    তবে কি আমরাও অপরাধী। তিমির চৈতীর কাঁধে হাত রাখে।
–    চুরি করে প্রেম করছি। অপরাধতো বটেই।
তিমিরের মনে অদৃশ্য একটা কৌতুহল। পড়ন্ত বিকেল। পার্কটা একেবারে নির্জন নয়। অসংখ্য মানুষের পদভারে মুখরিত। সামনেই একজন নারী পুরুষ পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে। সম্ভবত বিবাহিত। বিয়ের পরে মেয়েদের শরীরে মন কাড়া একটা গন্ধ থাকে। এই মেয়েটিরও আছে। নতুন বিয়ে হয়েছে। পার্কের বেঞ্চিটা পাশ কাটতেই বাতাসে সেই গন্ধের মাতাল ছোঁয়া লাগে। তিমির চৈতী দু’জনেই তাকায়। তিমির প্রশ্ন করে-
–    ওরা এত সুখী কেন।
–    স্বীকৃতি পেয়েছে বলে।
–    ওরাও কি তোমার আমার মত। প্রথমে চুরি করে প্রেম তারপর বিয়ে।
–    প্রথমটা বলতে পারব না। তবে দ্বীতিয়টা আমাদের মতোই।
–    ভুল বললে।
–    ভুল কেন। ওরা বিয়ে করে প্রেম করছে আর আমরা বিয়ের আগে প্রেম করছি।
চৈতীর কাঁধে তিমিরের হাতটা চাপা ইঙ্গিত করতেই চৈতী আরও ঘা ঘেষে বসে। বেলা পরে এসেছে। এখনি লাইটগুলো জ্বলে উঠবে। তারপর দারোয়ান এসে বাঁশী বাজিয়ে বলবে – বেরিয়ে যান—বেরিয়ে যান। তিমির চৈতীর চোখে চোখ রাখে। চোখে চোখে কথা হয়। চৈতীর অনামিকাটা ডান হাতে টেনে নেয়। আলতোভাবে আঙ্গুল বুলাতে থাকে। আঙ্গুলের ডগাটা দিয়ে তিমিরের ঠোঁঠে আলতো আঁচর কাটে। চৈতী কিছুই বলছে না। ভালোই লাগছে। তিমির আবার প্রশ্ন রাখে-
–    আমরা কি সুখী হতে পারব।
–    তোমার একটা চাকরী হয়ে গেলে বলতে পারব।
তিমিরের মুখটা হঠাৎ করে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। বলল-
–    আমার একটা চাকরীর খুবই প্রয়োজন তাই না চৈতী।
–    তুমি কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো।
–    না।
–    তবে ওভাবে বলছ কেন।
–    কষ্ট পাবো কেন। এমনি বলছিলাম। আসলে নিজের পায়ে দাড়াবার মত একটা কিছু না হলে কোন কিছুই আশা করতে পারছি না। সবকিছুই মরীচিকার মত মনে হচ্ছে।
–    আমি কিন্তু কথাটা কষ্ট পাবার জন্য বলিনি।
–    আমিও কিছু মনে করিনি। তুমি যা সত্য তাই বলেছ, আমি খুশী হয়েছি।
–    কিন্তু চেহারা দেখে তো ঠিক উল্টোটা মনে হচ্ছে।
–    চেহারা দিয়ে তো মন বুঝা যায় না। চল উঠা যাক। টিউশানি আছে।
যতক্ষন রিক্সায় ছিল তিমির কোন কথা বলেনি। মনের উপর একটা অদৃশ্য পাথর চাপা পরে আছে।  রিক্সাটা বড় রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।  চৈতী কয়েকবার তাকিয়েছে তিমিরের দিকে। তিমির আড়চোখে টের পেলেও নির্বিকার। পৃথিবীটা ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে। রিক্সাটা একটু নির্জন জায়গায় যেতেই চৈতী জিজ্ঞাসা করল-
–    একটা কথা রাখবে।
–    বলো।
–    এদিকে মুখ ফেরাও। বলছি।
তিমির ফিরে তাকায়। শোন বলে চৈতী ডান হাতে তিমিরের মাথাটা টেনে মুখের কাছে নিয়েই একটা চুমু দেয়। তারপর বলে-সরি, আদর করে দিলাম। রাগ করো না প্লিজ। তিমির মৃদু হাসল। এরপর কি আর রাগ করা যায়। যে কৌতুহলটা তিমিরের নিজের মনেই দানা বেঁধেছিল। কিছুদুর যেতেই তিমির মাঝপথে নেমে পরে। রিক্সাটা এগিয়ে যায় সামনে।

চলবে…….

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top