Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ফেরা

: | : ০৩/১০/২০১৩

কনা যেখানে বসে আছে সেখানটা একেবারে ফাঁকা । দীঘির এই পাড়ে সাধারণত কেউ তেমন একটাআসে না। কনা আজ দারুন সেজেছে যাকে বলে নববধূর সাঁজ। কনা ছোট বেলা থেকেই সুন্দরী।কনার দাদু আদর করে তাকে শ্রীদেবী বলে ডাকত। রুপটা আসলেই তার শ্রীদেবীর মতই।সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগেই আছে। একবার যদি কেউ ভুল করে তাকায় সে পুনরায় তাকাবেই।কনা ছিল বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। লেখাপড়া এবং দুরন্তপনায় ও সে ছিল সকলেরআগে। নবম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীতে সে নওয়াব ফয়জুন্নেছা স্কুল থেকে প্রথম স্থানঅধিকার করে।
তার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে একজন উকিল বানাবেন। মেয়েকে উকিলবানানোর পেছনে ও একটা কারন ছিল। কনার বাবা আহমেদ সাহেব একবার অফিসের ঝামেলায়জড়িয়ে পড়েন। সেই সময় তিনি একজন মহিলা এডভোকেটের কাছে যান। সে মহিলার ব্যাবহারএবং কর্মদক্ষতা আহমেদ সাহেব কে বেশ মুগ্ধ করে। সেই থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন তারমেয়েকে ও তিনি একজন এডভোকেট বানাবেন ।কনার বাবার সেই স্বপ্ন পুরন হয়নি। কেনহয়নি? তা আস্তে আস্তে জানা যাবে।
কনাদের বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশী নয়।শহরের স্কুল অনেক ছাত্রী লেখাপড়া করে সে কারনে বিশেষ করে একজনের দিকে খেয়াল তেমনএকটা থাকে না। শহরের রাস্তার পাশের ছোট ছোট চায়ের দোকান গুলো বখাটে ছেলেদেরআড্ডাস্থল। সেই দোকানের সামনে লাগোয়া বেঞ্চে বসে একেকটা বখাটে মেয়েদের স্কুলেরসময়ে বসে অনায়াসে আড্ডা মারে আর সিগারেট ফুঁকে।
কনার উপর নজর পড়ে তেমনি একআড্ডাবাজ বখাটের । কনা স্কুলে যাবার পথে সামনে এসে দাঁড়ায়। কনার সাথের বান্ধবীরাসকলে চলে যায় কনাকে একা রেখে। এভাবে ঘটনা ঘটতে থাকে দিনের পর দিন। কনা প্রতিবাদীহতে চায় কিন্তু পারে না। বাসায় ও কাউকে কিছু বলতে পারে না। এভাবে দিনের দিনের পরদিন অবস্থা চরমে উঠে যায়। কনা বাধ্য হয় পরিবারে ঘটনা জানাতে। কনার বাবা আহমেদসাহেব সব শুনে একদিন মেয়েকে ফলো করেন। রাস্তার মাঝে কনাকে আটকে রেখে জুলহাস এটাসেটা বলে। আহমেদ সাহেব এগিয়ে যান। আহমেদ সাহেব কে দেখে কয়েকটি ছেলে চলে যায়, তবেজুলহাস যায়না। আহমেদ সাহেব সরাসরি জুলহাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন
কি বাবা তোমারকি সমস্যা? আমার মেয়েকে স্কুলে যেতে দাও। রাস্তায় ওর পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছকেন?
চাচা চুপ থাকেন।বেশী বাড়াবাড়ি কইরেন না, তাইলে কিন্তু সমস্যাআছে।

তাই। নাকি! সেদিনের ছেলে তুমি আমাকে সমস্যা শিখাতে এসেছ?
বেশীবাড়াবাড়ি কইরেন না। আমি এসিড মাইরা দিমু, তহন দেহি আপনার মাইয়ারে কে পছন্দকরে।

দুজনের বাক বিন্ডতায় লোক জড় হয়। সাধারন মানুষ আহমেদ সাহেব কে বুঝিয়েবলে
ছেলে গুলো ভাল না , আপনি ওদের সাথে লাগতে যাইয়েন না । বাসায় যান
রাগেদুঃখে আহমেদ সাহেব মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সব শুনেথানায় ডায়রী করতে বলেন। আহমেদ সাহেব মেয়েকে নিয়ে থানায় ডায়রী করেন । এতে হিতেবিপরীত হয়। পুলিশি তদন্তের সময় কেউ জুলহাসের বিপক্ষে কথা বলেনি। এতে করে জুলহাসেরসাহস বেড়ে যায়। পাড়ার দোকান ছেড়ে জুলহাসের দল বাসার সামনে আড্ডা দেওয়া শুরুকরে, মাঝে মাঝে সিটি বাঁজায়, আহমেদ সাহেব কে দেখলে তিরস্কার করতে থাকে। আহমেদসাহেব অফিসের কর্তা কে জানান । তিনি বলেন আপনি বদলী হয়ে যান। একসময় বদলিরব্যাবস্থা হয়ে যায়। আহমেদ সাহেব মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু নিয়তি বলেএকটা কথা থেকেই যায়। আহমেদ সাহেবের বোন কনার জন্য এক বিদেশী পাত্রের সম্বন্ধ নিয়েআসেন। মেয়ের বয়স সবে পনের তারপর ও আহমেদ সাহেব রাজি হয়ে যায়। এক রাতে বোনেরবাসা চট্রগ্রামের উদ্দেশ্য সকলের অগোচরে বাসার সকলে ট্রেনে করে যাত্রা করে। কনা এসববিশয়ে তখনো কিছুই জানেনা ।


হুট করে আমার বিয়ে হয়ে যায় বাবার বয়সী একলোকের সাথে। তার অনেক পয়সা আছে । আর কুমিল্লায় জুলহাসের ঘটনার কারনে বাবা তারমেয়েকে উকিল বানানোর স্বপ্ন বাদ দিয়ে অপরিনত বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন আমাকে ফুফুরবাসায় এনে। বিয়ে মানে কি ? আমার জানা ছিল না। টিভিতে হিন্দি মুভি এবং গল্পের বইপড়ে জানতাম একে অন্যেকে ভালোবাসে, প্রেম করে বিয়ে করে। ব্যাস বিয়ে সম্পর্কে আমারধারনা অতটুকুই। একদিন সন্ধ্যায় আমাকে সকলে মিলে একটা কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদদিল। আমাকে বেশ করে সাজানো হল । আমি তখনো শাড়ি পড়তে শিখিনি । কিন্তু তবু ও আমাকেজোর করে শাড়ি পড়ানো হল। আমার গায়ে হলুদের ভিডিও করা হল । আমি তখন কেমন যেন একটাঘোরের মধ্যে বাস করতে লাগলাম। এরপরদিন আমার বিয়ে হয়ে গেল । আমাকে বেশ সুন্দর করেসাজিয়ে লাল বেনারসি শাড়ি পরিয়ে বাবার সমান এক লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল।বরের ভাড়া করা ফুল দিয়ে সুসজ্জিত গাড়িতে করে আমাকে ফেনীতে বরের বাড়ি নিয়ে আসাহল। আসতে আসতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে। সকলে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সুসজ্জিত এক রুমে নিয়ে বসিয়ে দিল । একে একে সকলে চলে গেল। আমি একা সুসজ্জিত খাটেবসে রইলাম।
এক সময় আমার বর এল। সে আমাকে কোন কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে কাপড়ছাড়তে বলল। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। বিয়ে মানে কি এই? আমি জানি না আমারজানা ছিল না। এরপরের ঘটনাগুলো আমাকে বাস্তব জীবন থেকে আঁধারে নিয়ে গেল। আমি বাচ্চাএকটা মেয়ে তার সাথে কি করতে পারি। আমার বড় আমাকে নিয়ে সারা রাত খেলল। আমি একটাকাটা মুরগির মত সারারাত যন্ত্রনায় ছটপট করলাম। তাতে তার কিছুই আসে যায় নি।কান্নায় আমি বুক ভাসালাম। কাকে বলব দুঃখের কথা ।
তারপর ও বাবার সন্মানের দিকেতাকিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাইলাম। কিন্তু সেই বেঁচে থাকা ছিল শুধুই বেঁচে থাকা ।ভালবাসা কিংবা জীবনের কোন পুর্নতা ছিল না সেখানে। তার পর ও বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল , ছিল ভবিষ্যত।একদিন আমার পাসপোর্ট করা হয়। আমি দুবাই চলে যাব আমার বরের কাছে।বাবা মা দারুন খুশি। মঙ্গল বারে গালফ এয়ারের এক ফ্লাইটে করে আমি দুবাই চলে গেলামআমার স্বামীর কাছে। তখন সকল কষ্ট ভুলে আস্তে আস্তে স্বামীকে ভালোবাসতে শুরুকরেছিলাম, মেনে নিতে চেষ্টা করছিলাম তার আর আমার বয়সের ব্যাবধান কে। দুবাইয়ে একসপ্তাহ পরে আমি বড় ধাক্কা খেলাম। সেদিন রাতে আমার স্বামী সাথে করে দুইজন বন্ধনিয়ে এল । তাদের কে আপ্যায়ন করে খাওয়ালাম। রাত বাড়তে লাগল তাদের যাওয়ার কোননাম নেই। একসময় আমার স্বামী আমাকে আসল কথা বলেই ফেলল। তার বন্ধু দুইজন আমার সাথেথাকবে রাতে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি? কিন্তু পরে জানলাম এটাই তার ব্যাবসা , দেশ থেকে বিয়ে করে এনে এখানে দেহব্যাবসা করায়। আমি অসহায় হয়ে গেলাম। দেশ ছেড়েএই সুদূর প্রবাশে আমি কি করতে পারি? এই কলঙ্কের কথা কি কাউকে বলা যায়। আমি চুপ করেথাকলাম। আর প্রতি রাতে এক জন দুইজন করে নতুন মানুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে লাগলামইচ্ছের বাইরে। এদিকে আমার বাবাকে রাতের আঁধারে কে বা কারা বাসা থেকে ডেকে নিয়েযায়। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমার মা অসহায় হয়ে পড়েন । আমি তখনআমার স্বামীর কাছ থেকে কিছু টাকা মায়ের জন্য পাঠালাম। আমার স্বামীর কাছে আমি আরোবেশি অসহায় হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে লোকের সংখ্যা বাড়তে লাগল। সেই সময় একদিন খবরএল ,আমার মা ব্রেইন স্ট্রোক করে মিডল্যান্ড হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। আমার স্বামীকেঅনেক বুঝিয়ে দেশে এলাম।

আমি দেশে আসার চার দিনের মাথায় আমার মা মারাযায়। এরপর পৃথিবীতে আমার আপন বলতে আর কেউ রইলো না। আজ আমি আমার গ্রামের বাড়ি মানেআমার দাদার বাড়িতে এসেছি পাঁচ দিন হল। দাদার বিশাল বাড়ি, দাদা আমাকে পেয়ে অনেকখুশি। কিন্তু আমি আমার অপবিত্র শরীর নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাইনা। শুনেছি এইদিঘী অনেক গভীর। ছোট বেলা থেকে আমি সাতার জানিনা। তাই ভাবছি দীঘিতে লাফ দিয়ে জীবনবিসর্জন করে দেই। এই আঁধারে ঘেরা জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ?
দীঘির জলে ঝাঁপদেব দেব করে আমি ঝাঁপ দিলাম। কিন্তু একটা শক্ত মজবুত হাত আমাকে জড়িয়ে ধরল। তারহাতের বাঁধুনি থেকে আমি মুক্তি পেলাম না। সে আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এলদীঘির পাড়ের সেলু মেশিন ঘরে। সে আর কেউ নয় আমার দাদার খাস চাকর বিল্লাল। সেইচ্ছেমত আমায় ভোগ করল। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল যা মরতে যখন ছেয়েছিস এবার গিয়েমর।

এলোমেলো চুল শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিল্লাল বুড়োর অত্যাচারের ক্ষত চিহ্ননিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। কেন জানি এখন আর আমার মরতে ইচ্ছে করছে না। পুরুষ গুলোকেদিখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে এরপর ও বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু আমার তো কিছুই নেই যাদিয়ে জীবিকা নির্বাহ করব। দাদার কাছে থাকতে মন সায় দিচ্ছে না । ভাবছি আবার ফিরেযাব দুবাই।
কিছুক্ষণ পর আমার ফ্লাইট। আমি লাউঞ্জে বসে আছি। গালফ এয়ারের বিমানটিএখনো এসে পৌঁছায়নি। আজ থেকে সাড়ে চার মাস পুর্বে আমি একটা জীবনের রঙ্গীন স্বপ্ননিয়ে দুবাই গিয়েছিলাম। আর আজ আমি একটা অন্ধকার জগতে প্রবেশের জন্য পাড়ি দিচ্ছি।আমি জানি আমার সামনে এক আমবশ্যার আঁধার। বেঁচে থাকতে হলে আমাকে এই আধারেই পথ চলতেহবে। কারন নারীর শরীরই যে তার বড় শ্ত্রু, তার জীবনের বড় অন্ধকার।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top